আজকের বাংলা তারিখ
  • আজ সোমবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৪ ইং
  • ১১ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ১৪ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৫:১৮

গণিতের সর্বোচ্চ সম্মানে এক নারী

আমরা অনেকেই যে গল্পটা জানি, তা হচ্ছে এই: আলফ্রেড নোবেল সাহেবের প্রেমিকা ছিলেন এক জন। তিনি না কি নোবেলকে বিয়ে না করে, এক গণিতজ্ঞের ঘরনি হন। সেই রাগে নাকি নোবেল প্রাইজ় গণিতজ্ঞদের দেওয়া হয় না। কিন্তু নোবেলের জীবনীকারেরা জানিয়েছেন, ওটা নেহাত গল্পই, সত্যি ঘটনা নয়।

তা হোক, সাম্প্রতিক কালে গণিতের জন্য নির্ধারিত হয়েছে অনেকগুলো পুরস্কার। যেমন, আবেল প্রাইজ়। যাকে বলা হয় গণিতের নোবেল পুরস্কার। তরুণ গণিতজ্ঞদের জন্য অবশ্য আর একটা প্রাইজ় ১৯৩৬ সাল থেকে চলে আসছে। ওই বছর চার্লস ফিল্ড নামে কানাডার এক গণিতজ্ঞ অঙ্কের আন্তর্জাতিক পুরস্কার হিসাবে ফিল্ডস মেডেলের প্রবর্তন করেন। কিন্তু এই পুরস্কার কোনও ভাবেই নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কারণ, এর আর্থিক মূল্য কম— বর্তমানে ১৫০০০ কানাডিয়ান ডলার এবং প্রতি ৪ বছরে ২-৪ জন গণিতজ্ঞকে, যাঁদের বয়স ৪০ বছরের কম, এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

২০০২ সালে আবেল পুরস্কারের প্রবর্তন হয়। আবেল পুরস্কারের সৃষ্টির ইতিহাস এরও এক শতাব্দী আগে। নিলস হেনরিক আবেল (১৮০২-১৮২৯) নরওয়ের এক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ছিলেন। ১৮৯৯ সালে সোফাস লাই নামে নরওয়ের এক গণিতজ্ঞ যখন জানতে পারেন যে আলফ্রেড নোবেলের উইলে অঙ্কে অবদানের জন্য কোনও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকছে না, তখন তিনি ১৯০২ সালে অর্থাৎ আবেলের জন্মের শতবর্ষ থেকে, আবেল পুরস্কার শুরু করার প্রস্তাব দেন। নরওয়ের তৎকালীন রাজা এই পুরস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে রাজি হন। কিন্তু এর পরেই ১৮৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রস্তাবক লাই মারা যান। ফলে প্রস্তাবটি স্থগিত হয়ে যায়। ১৯০৫ সালের ৭ জুন নরওয়ে ও সুইডেনের মধ্যে সংযুক্তি নরওয়ে বাতিল করে দেয়। এর ফলে আবেল পুরস্কারের প্রস্তাবটি ধামাচাপা পড়ে যায়।

প্রায় এক শতাব্দী পরে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ২০০২ সাল থেকে, অর্থাৎ আবেলের জন্মের দ্বিশতবর্ষ থেকে আবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। নরওয়েজিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স অঙ্ক অথবা কম্পিউটার, রাশিবিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদিতে অঙ্কের বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। এই পুরস্কারের বর্তমান আর্থিক মূল্য ৬০ লক্ষ নরওয়েজিয়ান ক্রোনে বা ৬.৬ লক্ষ আমেরিকান ডলার।

শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম এক জন মহিলা গণিতজ্ঞ, কারেন কেসকুল্লা উলেনবেক ২০১৯ সালে আবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৪২ সালের ২৪ অগস্ট কারেন আমেরিকার ওহায়ো প্রদেশে ক্লিভল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইঞ্জিনিয়ার ও মা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ছেলেবেলা থেকেই কারেন নির্জনতা পছন্দ করতেন। সব রকমের খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। আর বই, বিশেষত বিজ্ঞানের বই, পড়তে খুব ভালবাসতেন। স্কুলে পড়াকালীন দুই প্রখ্যাত পদার্থবিদ ফ্রেড হয়েল ও জর্জ গ্যামো-র দুটি আলাদা বই পড়ে কারেন পদার্থবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন। তাই তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। মারিয়ানা রুথ কুকের বিখ্যাত গণিতজ্ঞদের জীবনীর উপর লেখা একটি বই পড়ে তিনি অঙ্কের প্রেমে পড়ে যান।

১৯৬৫ সালে তিনি ওলকে উলেনবেক নামে এক জৈব পদার্থবিদকে বিয়ে করেন ও আমেরিকার ব্র্যান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে অঙ্কে মাস্টার্স ও ১৯৬৮ সালে ডক্টরেট করেন। এর পর এমআইটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৭ সালে তিনি অস্টিনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওখানেই শিক্ষকতা করেন।

অঙ্কে উলেনবেকের অবদান প্রধানত দু’টি ক্ষেত্রে— জ্যামিতিক বিশ্লেষণ ও গেজ তত্ত্ব। কারেনকে জ্যামিতিক বিশ্লেষণের পুরোধা বলা হয়। কারেনের গবেষণার ফলে তথাকথিত ‘মিনিমাল সারফেস’ (সাবান জলের বুদবুদের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য) ও ‘ইনস্ট্যানটন’ নামে অঙ্কের দুই বিশেষ ক্ষেত্রে গণিতজ্ঞদের ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর গবেষণার সাহায্যে তিনি গণিত ও পদার্থবিদ্যার সফল সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ২০১৯ সালের আবেল পুরস্কার পাওয়া অবশ্যই উলেনবেকের সর্বোচ্চ সম্মান।

কারেনের জীবনের একটা দিকের কথা না বললেই নয়। স্টেম— অর্থাৎ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি ও অঙ্কে— মহিলা গবেষকদের বঞ্চনার কথা সবাই জানেন। উলেনবেকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯৬৫ সালে তিনি যখন ওলকে উলেনবেককে বিয়ে করেন, তখন কোনও স্বামী-স্ত্রী-ই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা গবেণাগারে চাকরি পেতেন না। স্ত্রীকে হয় শিক্ষকতা বা গবেষণা ছাড়তে হত, অথবা বিবাহবিচ্ছিন্ন হতে হত শুধুমাত্র একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্য। সেই কারণেই উলেনবেককে এমআইটি ও ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় আরবানা-শ্যাম্পেন-এর শিক্ষকতা ছাড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিশেষত মহিলা সহকর্মীদের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন পান। প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে কারেন ও উলেনবেকের বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং ১৯৮০-এর দশকে কারেন এক গণিতবিদ রবার্ট উইলিয়ামস-কে বিয়ে করেন।

MY SOFT IT Wordpress Plugin Development

Covid 19 latest update

# Cases Deaths Recovered
World 0 0 0
Bangladesh 0 0 0
Data Source: worldometers.info

Related News

১০ বছর ধরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করছে চিন, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করল ‘ব্ল্যাকবেরি’

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের জন্য খবরের শিরোনামে রয়েছে চিন। এই দেশেরই এক শহরে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, ...

বিস্তারিত

হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে যোগ দিতে পারবেন চারজনের বেশি ইউজার

লক ডাউনের মধ্যে পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভিডিও কল। আর সেই কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ...

বিস্তারিত

ইরফানের জন্য শোক ফেইসবুক-টুইটারে

বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা ইরফান খান মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ২০১৮ সালে তার মস্তিষ্কে ...

বিস্তারিত

বেঁচে গেল মানব জাতি, পৃথিবীর পাশ ঘেঁষে বেরল বিরাট গ্রহাণু

নিউইয়র্ক: কান ঘেঁষে না হলেও পাশ ঘেঁষে তো বটেই। কেটে গেল ফাঁড়া। পৃথিবীর পাশ কেটে বেরিয়ে গেল প্রায় ২ কিলোমিটার ...

বিস্তারিত
%d bloggers like this: