আজকের বাংলা তারিখ
  • আজ সোমবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৪ ইং
  • ১১ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ১৪ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১২:৫৫

বাংলাদেশের বাইনো

স্লাশ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট অ্যাকসেলেরেটর ইউরোপের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি আয়োজন। ২৭ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত এবারের আসরে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশের উদ্যোগ বাইনো। উদ্যোগটি মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। এর প্রতিষ্ঠাতারা জানালেন শীর্ষ দশে ওঠার অভিজ্ঞতার কথা।

বিখ্যাত ব্রাজিলীয় লেখক পাওলো কোয়েলহো বলেছিলেন, ‘হোয়েন ইউ ওয়ান্ট সামথিং, অল দ্য ইউনিভার্স কন্সপায়ার্স ইন হেলপিং ইউ টু অ্যাচিভ ইট।’

কথাটি ফলে গেল ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। তার আগে বলে নিই, মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নিয়াজ পাটওয়ারির সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম ১২ ডিসেম্বর সকালে। স্লাশ জিআইএ–র অভিজ্ঞতা এবং বাইনো অ্যাপটি নিয়ে কথা হয়েছিল সেদিন। বাইনো কীভাবে কাজ করে, তা সেদিন দেখিয়েছিলেন নিয়াজ। তারপরও মনে মনে দেখতে চাইছিলাম, যাদের জন্য এই অ্যাপ, অর্থাৎ শিশুরা কীভাবে নিচ্ছে এটি।
১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম ঢাকার বাংলামোটরে বইয়ের দোকান বাতিঘরে। সেখানকার শিশুদের কর্নারে গিয়ে দেখি, ছোট্ট এক শিশু মেঝেতে বসে আছে। মহা উত্তেজিত সে। হাতে একটা বই। তার মা সেই বইয়ের ওপর স্মার্টফোন ধরে রেখেছেন। বইয়ের পৃষ্ঠায় আঁকা হাতি-ঘোড়াগুলো ওই ফোনের পর্দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। সেটা দেখেই শিশুটি মহা রোমাঞ্চিত। আরও খানিকটা কাছে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম, সব বাইনো অ্যাপের কারসাজি!

বাইনোবৃত্তান্ত
যে অভিজ্ঞতাটির কথা বললাম, সেটিই করে বাইনো অ্যাপ। মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের এই অ্যাপটির সঙ্গে বইও আছে। কিংবা বলা যায়, বইয়ের সঙ্গে অ্যাপও আছে। বাংলা, ইংরেজি আর আরবি বর্ণমালার বই আছে। আছে ছবি আঁকা শেখার বই। আরও আছে জু বক্স—প্রাণী চেনার বই। স্মার্টফোনে বাইনো অ্যাপটি নামিয়ে বইয়ের ওপর ধরলেই বইয়ের ছবিগুলো ত্রিমাত্রিক রূপ পায়। ‘অ’-তে অজগর আসছে তেড়ে—বাইনো অ্যাপ খুলে এর ওপর ধরলেই দেখবেন একটি অজগর নড়াচড়া করছে! কিংবা বাঘ আর সিংহের ওপর ফোন ধরলেই তুমুল ঝগড়া শুরু করেছে প্রাণী দুটি।
মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের প্রধান উদ্যোক্তা মাশনুন কিবরীয়া বলছিলেন, ‘২০১৬ সালে আমরা এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। শিশুদের পড়াশোনার ভীতি দূর করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমরা চেয়েছি, এমন কিছু করতে, যাতে শিশুরা আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করবে। বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছে। বিশাল একটা পরিবর্তন আসছে। প্রযুক্তি এখানে চালিকা শক্তি। তাই আমরা অগমেন্টেড রিয়েলিটি এ আর নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং সেটা থেকেই বাইনো অ্যাপের শুরু। আমরা চাই, আমাদের শিশুরা যেন বিশ্বের এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে।’
নতুন দিনের প্রযুক্তিনির্ভর এই বাইনো অ্যাপ নিয়েই মাশনুন কিবরীয়ারা এবার গিয়েছিলেন স্লাশ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট অ্যাকসেলেরেটরে। সেখানে তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন
শীর্ষ ১০–এ

বিশ্বের নানা প্রান্তের সম্ভাবনাময় উদ্ভাবনী উদ্যোগ (স্টার্টআপ) সবার সামনে মেলে ধরাই স্লাশ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট অ্যাকসেলেরেটরের (জিআইএ) কাজ। আর অলাভজনক উদ্যোগ ও প্রযুক্তি নিয়ে বৈশ্বিক এক সম্মেলন হলো স্লাশ। এই স্লাশেরই একটি অংশ হলো স্লাশ জিআইএ। এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে ফিনল্যান্ড সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং একাধিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান। নবীন উদ্যোক্তারা এ আয়োজনে বিশ্বের বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ পান। সুযোগ মেলে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার।
শীর্ষ ১০–এ ওঠা উদ্যোক্তারা স্লাশের মূল অনুষ্ঠানেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। প্রতিবছর স্লাশের মূল আসরটি বসে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে। এর শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ২০১৫ সাল থেকে টোকিও, সাংহাই ও সিঙ্গাপুরেও স্লাশের আসর বসছে। এ বছরের সম্মেলনটি হয়ে গেল ডিসেম্বরের ৪ ও ৫ তারিখে। এতে অংশ নেন ৩ হাজার ১০০ উদ্যোক্তা, ১ হাজার ৮০০ বিনিয়োগকারী এবং সাড়ে ৬০০ সাংবাদিক। এ বছর স্লাশ জিআইএর বুটক্যাম্প শুরু হয়েছিল নভেম্বরের ২৭ তারিখে। এতে অংশ নেয় বিশ্বের ১৯টি উদ্যোগ। তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের দুটি উদ্যোগ—বাইনো এবং যান্ত্রিক। এক সপ্তাহব্যাপী ওই ক্যাম্পে প্রতিযোগিতা শেষে শীর্ষ ১০–এ ওঠে বাংলাদেশের মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের বাইনো। এর ফলে ৫ ডিসেম্বর স্লাশের মূল পর্বে নিজেদের কাজ বিশ্বের সামনে মেলে ধরার সুযোগ পায় প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে স্লাশ জিআইএ
ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে স্লাশ জিআইএর আসর বসার আগে বাংলাদেশে হয় প্রাথমিক বাছাই। এ বছর বাংলাদেশ থেকে বাছাই করা হয় ‘যান্ত্রিক’ এবং ‘বাইনো’ উদ্যোগ দুটি। বাংলাদেশে স্লাশের এ আয়োজনের দায়িত্ব বর্তায় এমসিসি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আশরাফ আবীর বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমরা এ আয়োজনটি করছি। এ বছর স্লাশ গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট অ্যাকসেলেরেটরে অংশ নিতে ১২৬টি আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্য থেকে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্য থেকে বুটক্যাম্পসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিনটি উদ্যোগকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে যান্ত্রিক এবং বাইনোকে দেওয়া হয় চূড়ান্ত মনোনায়ন। দুটি উদ্যোগই সম্ভাবনাময়। যান্ত্রিক পরিবহন খাতে এবং বাইনো শিক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।’

বাইনোর শক্তি
স্লাশ জিআইএ–র শীর্ষ ১০–এ বাইনো কীভাবে জায়গা করে নিল? শক্তির জায়গা কোনটি? এই প্রশ্নে নিয়াজ পাটওয়ারি বলেন, ‘মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সব সময় আমাদের অনুপ্রাণিত করেন সমস্যা সমাধানমূলক কিছু করতে। তেমন কিছু করার জন্য আমাদের মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভের দলটি দারুন। এই দলে আছেন প্রযুক্তি ও সৃজনশীল কাজে দক্ষ কিছু মানুষ। এছাড়া বাইনো অ্যাপের জন্য শিশুবিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদেরাও যুক্ত আছেন। আমরা এই কাজটি ভালোবেসে করি। ব্যবসার জন্য নয়, আমরা এটা শুরু করেছি নিজেদের প্রয়োজনে। আমি নিজে একজন বাবা, ফলে নিজের প্রয়োজন থেকেই শুরু করেছিলাম। আর স্লাশে জিআইএ–তে যখন সবাই দেখল, বাংলাদেশের মতো তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশে আমরা এ ধরনের কাজ করছি, তখন ওরা মুগ্ধই হয়েছে। স্লাশ জিআইএ–তে যাওয়ার ব্যাপারে এমসিসি লিমিটেডের আশরাফ আবীর এবং যান্ত্রিক–এর আল–ফারুক শুভ ভাইদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁদের পরামর্শ খুব কাজে এসেছে।’
দেশের বাইরে শিক্ষামূলক এ ধরনের অ্যাপের বেশির ভাগই টাকা দিয়ে কিনতে হয়। বাইনো অ্যাপটি পাওয়া যায় বিনা মূল্যে। এটাও একটা বড় শক্তির জায়গা। এ ছাড়া শিশুদের প্রযুক্তিপ্রীতি এখন সবারই মাথাব্যথার কারণ। সে জায়গায় বাইনো প্রযুক্তির সঙ্গে কাগজের বইও প্রকাশ করছে। মাইক্রোটেকের জ্যেষ্ঠ অ্যানিমেটর মাহবুবুর রহমানের ভাষায়, ‘আমরা বই-অ্যাপ—দুটিই দিচ্ছি শিশুদের। অ্যাপ না চালালেও বই পড়া যায়। আর অ্যাপটি চালালে পড়াশোনার ব্যাপারটি আরও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। শিশুদের প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখার অবকাশ নেই। নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে।’
কেবল শিশুদের জন্য নয়, কিশোরদের জন্যও কাজ শুরু করেছে মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভ। এসবই বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সফটওয়্যার ডেভেলপার দানিয়া মুরং, ‘আমাদের শিক্ষাক্রমের সঙ্গে অগমেন্টেড রিয়েলিটির মেলবন্ধন নিয়ে কাজ করছি আমরা। দেশের স্কুলগুলোতে অগমেন্টেড রিয়েলিটিভিত্তিক গবেষণাগার তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। এর ফলে স্কুলে প্রয়োজনীয় উপকরণ বা সুবিধা না থাকলেও শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজ করতে পারবে।’
এই পরিকল্পনাগুলো কেবল দেশের সীমানায় বাঁধতে রাজি নয় মাইক্রোটেক ইন্টারঅ্যাকটিভ–দল। বাইনো অ্যাপটি যেন বৈশ্বিক হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারেও কাজ করছেন তাঁরা। আর এটাই নিশ্চয়ই স্লাশ জিআইএ–র শীর্ষ ১০–এ জায়গা করে নেওয়ার অন্যতম শক্তির জায়গা।

MY SOFT IT Wordpress Plugin Development

Covid 19 latest update

# Cases Deaths Recovered
World 0 0 0
Bangladesh 0 0 0
Data Source: worldometers.info

Related News

১০ বছর ধরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করছে চিন, চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করল ‘ব্ল্যাকবেরি’

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের জন্য খবরের শিরোনামে রয়েছে চিন। এই দেশেরই এক শহরে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, ...

বিস্তারিত

হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে যোগ দিতে পারবেন চারজনের বেশি ইউজার

লক ডাউনের মধ্যে পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভিডিও কল। আর সেই কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ...

বিস্তারিত

বেঁচে গেল মানব জাতি, পৃথিবীর পাশ ঘেঁষে বেরল বিরাট গ্রহাণু

নিউইয়র্ক: কান ঘেঁষে না হলেও পাশ ঘেঁষে তো বটেই। কেটে গেল ফাঁড়া। পৃথিবীর পাশ কেটে বেরিয়ে গেল প্রায় ২ কিলোমিটার ...

বিস্তারিত
করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত চীনে স্মার্ট হেলমেট

করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত চীনে স্মার্ট হেলমেট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হওয়া নতুন রোগী শনাক্তে অভিনব ব্যবস্থা নিয়েছে চীন সরকার। সম্প্রতি দেশটির কিছু ...

বিস্তারিত
%d bloggers like this: