বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছিল কিশোর রাশিদুল (১৭)। বাবাই তুলে দিয়েছিলেন ট্রেনে। মাঝরাতে মাঝপথে দুঃসংবাদটি পেল সে। সকালে বাড়ি ফিরে দেখল, জনতার ভিড়ের মধ্যে কাঁদছে ছোট দুই ভাই। বাবা-মা আর নেই। গুঁড়িয়ে গেছে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও।
রাজশাহী নগরের বহরমপুর সিটি বাইপাস এলাকায় রাস্তার পাশে রাশিদুলদের ঘর। গত মঙ্গলবার রাতে সেখানে ঢুকে পড়ে দ্রুতগতির চলন্ত একটি বাস। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় চাপা পড়ে মারা যান তাদের মা রেশমা বেগম (৩৫) ও বাবা বসির আহাম্মেদ (৪০)।
এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে এই দম্পতির দুই শিশুসন্তান আবদুল আলীম (১০) ও রাহাদ হোসেন (৬)। দুই ভাই ঘরের ভেতর আলাদা চৌকিতে ঘুমিয়ে ছিল।
রাশিদুলদের ঘরের ভেতরে ঢোকার আগে বাসের ধাক্কায় রেলওয়ের গুমটিঘর ভেঙে গেটকিপার রবিউল হাসান (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী চাম্পা বেগম (৫০) আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিউলের মেয়ে রীপা খাতুন বলেন, বাবার সঙ্গে তাঁর মা রাতে গুমটিঘরেই ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহত হন আরও ১০ বাসযাত্রী। মানিক নামের এক যাত্রীও এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত বাসযাত্রীদের মধ্যে পাঁচজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাসের ধাক্কায় রেলওয়ের পাকা গুমটিঘর বিধ্বস্ত হয়ে আছে। পাশেই নিহত বসির আহাম্মেদের টিনের ছাউনি দেওয়া ছাপরাঘর। সেটিও একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে বসে বসির আহাম্মেদের তিন ছেলে মা-বাবার ছবি হাতে কাঁদছে। আর শত শত লোক তাদের ঘিরে রয়েছে। এই তিন ভাইকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সবাই। মাঝেমধ্যে ছোট দুই ভাই কান্না ভুলে হাঁ করে শুধু মানুষ দেখছে।
বাসযাত্রী ফিরোজ কবির বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে কেয়া নামের বাসটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ছাড়ে। কোনো আসন খালি ছিল না। তিনি বনেটে বসেছিলেন। সাড়ে নয়টায় ছাড়ার কথা ছিল বাসটি।
দেরি হওয়ায় চালক খুব দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। খানাখন্দ, গতিনিয়ন্ত্রক কিছুই মানছিলেন না। এভাবে রাত দেড়টার কাছাকাছি বাসটি রাজশাহী নগরে প্রবেশ করে। বহরমপুর সিটি বাইপাস এলাকায় রেলক্রসিংয়ের দিকে মোড় নেওয়ার সময় চালক হঠাৎ ব্রেক করেন। এ সময় গাড়ি না ঘুরে সোজা ফুটপাতের ওপর দিয়ে ওই ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। চালক লাফ দিয়ে নেমে যান।
বাসযাত্রী ফিরোজ আরও বলেন, গাড়ির সামনের কাচ এসে তাঁর কপালে লাগে। তাঁর মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে এসে গাড়ির কাছেই অপেক্ষা করছেন। গাড়ির বক্সে জরুরি মালামাল রয়েছে তাঁর। দুর্ঘটনার একই রকম বর্ণনা দিলেন বাসযাত্রী হালিমা বেগম ও সুজন আলী। তাঁরাও অপেক্ষায় রয়েছেন বক্সের মালামালের জন্য।
রাশিদুল বলে, মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টায় ধূমকেতু আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সে ঢাকায় যাচ্ছিল। বাবাই তাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসেন। ট্রেন যখন যমুনা সেতুর কাছে, তখন তার মামি জোছনা বেগম ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। এতে ট্রেন থেকে যমুনা সেতুর পাশের স্টেশনে নেমে পড়ে সে। সব শুনে পুলিশ তাকে একটি ট্রাকে তুলে দেয়। সকালে রাজশাহী পৌঁছায়। এসে দেখে ছোট দুই ভাই ছাড়া আর কিছু নেই।
রাশিদুলদের কাছে তাদের একটি পারিবারিক অ্যালবাম পাওয়া গেল। তাতে ছোট ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের একটি ছবিতে দেখা যায়, রেশমা বেগম চাকু দিয়ে কেক কাটছেন। আর বসির আহাম্মেদ ছেলের মুখে কেক তুলে দিচ্ছেন। এক রাতের দুর্ঘটনায় তাঁরা এখন স্থায়ী স্মৃতির ফ্রেমেই বাঁধা পড়ে রইলেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ২০ বছর আগে বরিশাল থেকে ভাগ্যান্বেষণে রাজশাহী শহরে এসেছিলেন বসির আহাম্মেদ। বিয়ে করে সংসারী হয়েছিলেন। সরকারি জায়গা হলেও ছাপরাঘরটি তুলেছিলেন। সেখানেই ছেলেদের নিয়ে থাকছিলেন। রাশিদুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর ঢাকায় একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ নিয়েছিল। বাবা ভ্যান চালাতেন। মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন।
এদিকে দুপুরের দিকে বাসটি উদ্ধারের জন্য চেইন পুলি বসানোর কাজ চলছিল। সে সময় বৃষ্টি হওয়ায় পাশের বাড়ির একটি চালার নিচে রাশিদুল দুই ভাইকে নিয়ে বসে ছিল। ভাইদের নিয়ে কোথায় যাবে, কোথায় থাকবে জানতে চাইলে রাশিদুল কিছুই বলতে পারেনি। শুধু কাঁদছিল।
রাশিদুলের খালাতো ভাই ফরহাদ আহাম্মেদ বলেন, বরিশাল থেকে আত্মীয়স্বজন এসেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে সন্ধ্যার পর খালা-খালুর লাশ নিয়ে নগরের হেতেম খাঁ কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছিল।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি আহত রবিউল, চাম্পা বেগম ও মানিকের অবস্থা গুরুতর।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, নগরের রাজপাড়া থানায় দুর্ঘটনার একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
# | Cases | Deaths | Recovered |
---|---|---|---|
World | 0 | 0 | 0 |
Bangladesh | 0 | 0 | 0 |
Data Source: worldometers.info |
সানি সানওয়ার কাজ করেন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার। ...
বিস্তারিতধরুন আপনার অসাধারণ কিছু প্রোডাক্ট আছে। খুব সুন্দর করে কন্টেন্ট তৈরী করে নিজের ওয়েবসাইট সাজিয়েছেন। পণ্যের ছবি ...
বিস্তারিতআজকে যে বিষয়টা দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই, সেই ধারণাটার জন্ম স্ট্রিং তত্ত্ব থেকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এর ...
বিস্তারিতফেসবুক ব্যবহারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি প্রায় সবাই জানেন। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের ...
বিস্তারিত