৪ জুন, ২০১৬। ই-মেইলে বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে ইংরেজিতে একটি বার্তা এল, ‘তোমরা কি ইতিহাস রচনার জন্য প্রস্তুত? তাহলে যোগ দাও “ইত্যাদি ২০১৬”-এর দলের সঙ্গে আর ৫ জুন সময়মতো দিনটিকে স্মরণীয় করতে চলে এসো।’
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র বিদেশি পর্বের শুটিংয়ের কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিতেই ওই পর্বের সমন্বয়কারী ডাচ নাগরিক মাইকেল ও ফ্রান্সের মাইরিয়াম এই খুদে বার্তাটি পাঠান। নিজেদের উদ্যোগেই ঢাকায় বসবাসরত ভিনদেশি নাগরিকদের নিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন ‘ইত্যাদি বিদেশি টিম ২০১৬’।
‘ইত্যাদি’র এই বিদেশি পর্বের শুরুটা হয়েছিল প্রায় দুই যুগ আগে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যেই প্রতিবছর ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’তে এই পর্বটি যোগ হয়ে আসছে। প্রথমে এটি ১০-১২ জন বিদেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এতে অংশ নেন শ খানেক ভিনদেশি শিল্পী।
মজার ব্যাপার হলো, ‘ইত্যাদি’র প্রতি ভিনদেশি শিল্পীদের ভালোবাসা এতই প্রকট যে, প্রতিবছরই নতুন নতুন বিদেশি নাগরিক এসে এই পর্বের সঙ্গে যুক্ত হন। বছর ঘুরে অনেকে যখন কাজ শেষে ফিরে যান নিজ দেশ কিংবা নতুন কোনো কর্মস্থলে, তখনো কিন্তু এই ‘ইত্যাদি’ তাঁদের ভাবনাতেই থাকে। দেশ ছাড়ার সময় নিজেদের বদলে ‘ইত্যাদি’ দলে তাঁরা নতুন ভিনদেশিদের যুক্ত করে দিয়ে যান। দেখা যায়, ‘ইত্যাদি’ থেকে ডাক পড়লেই সবাই নিজ উদ্যোগেই এককাট্টা হয়ে যান। শুরু হয় মহড়া। মহড়ার ফাঁকে ভিনদেশি শিল্পীদের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় চমত্কার এক আত্মিক সম্পর্ক।
বিদেশি নাগরিকেরাও বলেন, ‘ইত্যাদি’ নাকি তাঁদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি করে দিয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রিচ বলেছেন, ‘গত বছরও আমি “ইত্যাদি”তে অংশ নিয়েছি। সত্যিকার অর্থেই বলতে পারি, বাংলাদেশে করা আমার সবচেয়ে স্মরণীয় কাজ এটি!’ ডাচ নাগরিক নেইলসও ‘ইত্যাদি’ বলতেই দারুণ উচ্ছ্বসিত। তাঁর ভাষায়, ‘আমি এ বছরের “ইত্যাদি”র জন্য অধীর হয়ে আছি।’
ডাচ কিশোরী ডাস্টিনএবারের ঈদে ‘ইত্যাদি’র বিদেশি পর্বের বিষয় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা। ডাচ কিশোরী ডাস্টিনকে বিয়ে করতে চান গ্রামের প্রভাবশালী এক মাতব্বর। প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন পর্তুগিজ যুবক পেড্রো। এবারের পর্বে অংশ নিয়েছেন ৮২ জন ভিনদেশি নাগরিক। এঁদের মধ্যে নাচে অংশ নিয়েছেন ৪০ জন। আর বাকিরা অভিনয়শিল্পী।
মজার বিষয় হলো, এবারের অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণের এক সপ্তাহের মধ্যে মাইকেল, মাইরিয়াম আর নেইলের পক্ষ থেকে হানিফ সংকেতের কাছে একটি ই-মেইল আসে। ভিনদেশি সেই শিল্পীরা মেইলের মধ্য দিয়ে ‘ইত্যাদি’র নির্মাতা হানিফ সংকেতকে নিমন্ত্রণ জানান একটি সন্ধ্যা তাঁদের সঙ্গে কাটানোর জন্য।
১৭ জুনের সন্ধ্যায় ইফতার আর নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য এক হন তাঁরা। বিদেশি শিল্পীরা সেই মিলনমেলায় হানিফ সংকেতের হাতে তুলে দেন ফ্রেমে বাঁধা ‘ইত্যাদি ২০১৬’-এর পুরো বিদেশি টিমের একটি ছবি। তাতে লেখা, ‘একটি স্মৃতিময় মুহূর্ত! ইত্যাদি বিদেশিজ ২০১৬’। ভিনদেশি এই আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখে হানিফ সংকেত বলেন, ‘আসলেই মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়ে, কয়েক দিনের মেলামেশায় বিদেশিদের সঙ্গে যে বন্ধন তৈরি হয়, তা কখনোই ভোলার নয়। বিদেশে চলে গেলেও তাঁরা আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। জানতে চান, “ইত্যাদি” কেমন আছে? ওঁরা যেমন আমাদের ভুলতে পারেন না, আমিও তেমনি ওঁদের ভুলতে পারি না।’