অভিনয়শিল্পী-পরিচালক কারোরই কথা বলার সময় নেই। যে করেই হোক, ঈদের নাটক ও টেলিছবিগুলোর শুটিং-এডিটিং শেষ করতে হবে। এরপর সেগুলো জমা দিতে হবে চ্যানেলে। তাই বলা যায়, ঈদের আমেজে আছেন অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারা।
বেশির ভাগ নাটকের শুটিং হয় ঢাকার উত্তরায়। তারকাদের ঈদ ব্যস্ততা সরাসরি দেখতে সম্প্রতি উত্তরায় যাই। বিকেল পেরিয়ে রাত হয়ে গেল শুটিং দেখেই।
শুরুতেই উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর। ২০ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে শুটিং হচ্ছে। ‘স্ক্রিপ্ট হাউস’ নামের এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নোভা ও মিশু সাব্বির। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তৌসিফ। এনটিভির জন্য ঈদের নাটকের শুটিং করছেন তাঁরা। কানামাছি নাটকটির পরিচালক হিমেল আশরাফ। নোভা বললেন, ‘বহুদিন পর আমি আবার কাজ শুরু করেছি। এবার ঈদে তো আমার বেশ কয়েকটি নাটক প্রচারিত হবে। ঈদের এসব কাজ শুরু হয়ে গেছে আরও মাস দুয়েক আগে।’
রাস্তায় দাঁড়িয়েই কথা হচ্ছিল নোভার সঙ্গে। এরই মধ্যে সামনে এসে দাঁড়াল একটি মাইক্রোবাস। পরিচালক নেমে বললেন, ‘আউটডোরের কাজ কিছু বাকি আছে। সূর্য থাকতে থাকতে কাজটা শেষ করতে হবে। তাই এ যাত্রায় আমাদের সবাইকে যেতে হচ্ছে।’ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছুটলাম ১৩ নম্বর সেক্টরের দিকে।
‘আপনঘর শুটিংবাড়ি’র সামনে আসতেই বেশ জটলা চোখে পড়ল। বাড়ির নিচের প্রহরী জানালেন, ওপরে মোশাররফ করিম আছেন।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই ডাক দিলেন মোশাররফ করিম। স্বপ্ন বিভ্রাট নাটকের শুটিং চলছিল সেখানে। দৃশ্যধারণ শেষ করে এসে কথায় কথায় বললেন, ‘কয়েক দিন ধরে দাঁতের সমস্যায় ভুগছি। এর মধ্যে একদিন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করিয়েছি। রিপোর্ট আনার সময়ও পাচ্ছি না।’
একই নাটকের শুটিং স্পটে কথা হয় অর্ষার সঙ্গে। বললেন, ‘মাস চারেক আগে থেকে ঈদের নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে। চলবে ঈদের আগ পর্যন্ত।’
এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ফোনে কথা হলো পরিচালক রুবায়েত মাহমুদের সঙ্গে। কোথায় আছেন জানতে চাইতেই বললেন, ‘এই মুহূর্তে দক্ষিণখানে একটি হাসপাতালে।’
হাসপাতাল! শুনে ভড়কে গেলাম। রুবায়েত মাহমুদ বললেন, ‘আরে না রে ভাই। হাসপাতালে সমস্যা নিয়ে নয়। ক্রসরোড নামে ঈদের নাটকের শুটিং করতে হাসপাতালে আসা।’
ভাঙাচোরা রাস্তা পার হয়ে হাসপাতালে যখন পৌঁছাই, তখন ঘড়ির কাঁটায় আটটা। জরুরি বিভাগের সামনে অনেক জটলা। একটু এগিয়ে যেতে পরিচালক ইশারা করলেন। ভেতরে ঢুকে দেখলাম, বিছানায় শুয়ে আছেন অপর্ণা। চিকিৎসক তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটা সময় ব্যর্থ হন চিকিৎসক। পরিচালক কাট বলার পরপরই অপর্ণা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন।
নিচতলার শুটিং শেষ, এবার উঠতে হবে দশতলায়। লিফটে যেতে যেতে কথা হয় অপর্ণার সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠান শেষে সকালের ফ্লাইটে ঢাকায় এসেছি। কোনো বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাইনি। শুটিংয়ে আসতে হয়েছে।’
লিফট থেকে নেমে শুটিংয়ের বিশ্রামকক্ষে ঢুকে দেখা হলো শাহেদ আলীর সঙ্গে। তিনিও এই নাটকে অভিনয় করছেন। পাশে মেকআপ নিচ্ছিলেন আফরান নিশো। বললেন, ‘এবার ঈদে সম্ভবত ৭০টি নাটক হবে। এবার বোঝেন আমার ঈদ কবে থেকে শুরু হয়েছে। আজও কত রাত পর্যন্ত শুটিং করতে হয় কে জানে।’
নিশো, অপর্ণা, শাহেদ আলী সেদিন ভোর পর্যন্ত কাজ করেছিলেন।