ওদের গায়ে ছিল কালো পোশাক। কালো কাপড় দিয়ে তৈরি পাঞ্জাবি ও প্যান্ট। তাদের ৮ জনের পায়ে ছিল কেডস্। এ রকম কালো পোশাক গত ১৭ জুলাই পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৪৪১/৮ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় কয়েক সেট কালো পোশাক পুলিশ উদ্ধার করে। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, বাড়িটিতে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা অবস্থান করেছিল।
মঙ্গলবার কল্যাণপুরে অভিযান চালানোর পর পুলিশ দেখতে পায় যে নিহত জঙ্গিদের পরনে রয়েছে ঐ ধরনের কালো পোশাক।
কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার ফ্ল্যাটের প্রতিটি কক্ষের মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো ছিল জিনিসপত্র। ৪ টি কক্ষের কোনটিতেই খাট বা চৌকি ছিল না। মেঝেতে তোষক বিছিয়ে জঙ্গিরা রাতযাপন করত। একটি কক্ষে পড়ে ছিল বড় আকারে একটি কালো কাপড়। এটিতে সাদা রঙ দিয়ে আরবিতে লেখা হয়েছে ‘আল্লাহু আকবর’। এই কালো কাপড়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পতাকার সঙ্গে মিল রয়েছে বলে উদ্ধারকারী দলের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টিলিজেন্সে গুলশানে নিহত ৫ জঙ্গির ছবি আপলোড করার সময় সেখানেও একই ধরনের পতাকা দেখা গেছে। আরেকটি কক্ষে লাল-সাদা রঙের একটি রুমাল উদ্ধার করা হয়। এই ধরনের রুমালকে বাংলাদেশে ‘সৌদি রুমাল’ বলে। এই রুমাল মাথায় পরিধান করা হয়। গুলশানে নিহত ৫ জঙ্গিদের মাথায় এ ধরনের রুমাল ছিল। আরেকটি কক্ষে ৯ টি বিভিন্ন সাইজের ট্রাভেল ব্যাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এগুলো নিহতদের। পাশেই দুইটি সাইড ব্যাগ রয়েছে। এদের একটি সেনাবাহিনীর পোষাকের আদলে কাপড় দিয়ে তৈরি। একটি কক্ষে বেশ কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে ড্রইং রুমে পড়ে ছিল ৭ টি লাশ। এদের প্রত্যেকের দেহ গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে। ৫ম তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলায় ওঠার সিঁড়ি মুখে পড়ে ছিল দুইটি লাশ। এই দুইটি লাশ দেখে পুলিশ ধারণা করছে, পুলিশের অভিযান চলাকালে তারা বাড়ির ছাদে ওঠার চেষ্টা করেছিল। বাড়ির সিঁড়ি বিশেষ করে চতুর্থ তলা ও ৫ম তলার সিঁড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য গুলির খোসা। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের দমন করতে ব্যবহার করে থাকতে পারে।
এদিকে, স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, কল্যাণপুরে উদ্ধার করা বিস্ফোরক দ্রব্য, জঙ্গিদের ব্যবহূত পোশাকের সঙ্গে গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গিদের ব্যবহূত পোশাকের মিল পাওয়া গেছে। আগের দুটি ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।