ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা সবাই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। আদিবাসীদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভূমি ও জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার বিষয়ক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে এ দিবস পালিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আদিবাসীরা শোষণমুক্ত হওয়া তো দূরের কথা, আদিবাসী পরিচয়ই পাননি। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই আদিবাসীদের মূল্যায়ন করে তাদের অধিকার দিতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতির দাবি পুনর্বার জানিয়ে বলেন, আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে সরকার উদাসীন। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই সংগ্রামী হতে হবে, সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হবে।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, সম্প্রতি কিছু কিছু আদিবাসী তাদের নিজস্ব ভাষার শিক্ষার উদ্যোগ নিলেও অধিকাংশ আদিবাসী তা পাচ্ছে না। বৃহত্তর এই জনগোষ্ঠীকে মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কোনো জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করে কোনো রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি প্রণয়নের পর আদিবাসীদের তাদের ভূমি অধিকার সংরক্ষণের জন্য যে দাবি জানিয়ে আসছিল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তা সংরক্ষণ হয়নি।
বক্তারা বলেন, ক্ষমতাযন্ত্রে ঢুকে গিয়ে আমরা আদিবাসীদের নতুন নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছি। বলছি, আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে নানা রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা হুমকির মুখে। সমতলের আদিবাসীরা ক্রমশ ভূমিহীন হয়ে পড়েছে।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং-এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডালেম চন্দ্র বর্মণ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, নারীনেত্রী খুশী কবীর, রবীন্দ্রনাথ সরেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা। বক্তব্যের শুরুতে আগে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন মাদল ও গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় হরিজন ঐক্য পরিষদ—‘সন্ত্রাস নয় শান্তি চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
Like this:
Like Loading...