গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক দিনের ঢাকা সফরে জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবিলার নামে যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, এ বিষয়েও গুরুত্ব থাকবে জন কেরির। এ ছাড়া নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার বিষয়টিও তিনি খতিয়ে দেখার সুযোগ নেবেন।
জন কেরি আগামীকাল সোমবার সংক্ষিপ্ত সফরে জেনেভা থেকে ঢাকায় আসছেন। কালই তিনি ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লি যাবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। জন কেরির বাংলাদেশ ও ভারত সফরের আগে দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে এই বিশেষ ব্রিফিংয়ে এই প্রতিবেদক ছাড়াও ভারতের একাধিক সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জঙ্গিবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে ওই মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আর কী কী করা যায়, সে বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে নিবিড় আলোচনা চলছে। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার মুখে বিমান চলাচলে নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার ব্যাপারে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। চিহ্নিত এসব ক্ষেত্রের বাইরে আরও কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে জন কেরি বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেবেন। তবে নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র।
মুখপাত্রের মতে, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, কোনো দেশের পক্ষে একা তা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আইএস ও আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তারা তা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে আগ্রহী। সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবিলার নামে যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, বাংলাদেশ সফরে জন কেরি এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবেন। নাগরিক অধিকার, বিশেষত বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটি তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশের সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার প্রশ্নে আরও সংস্কার প্রয়োজন। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমমান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করা হয়। গত তিন বছরে কারখানা পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়ানো, কারখানার ভবনগুলোতে সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগতিকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়। তবে কাজ এখনো বাকি আছে। বিশেষ করে শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তা—এই দুই খাতে এখনো যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এসব ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হলে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহালে ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
এদিকে ঢাকায় আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, জন কেরির ঢাকা সফরের দুই দিন আগে গতকাল শনিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস দুই দেশের সম্পর্কের এক তথ্যপত্র (ফ্যাক্ট শিট) প্রচার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রচারিত তথ্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক, উদারপন্থী ও সহনশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন ভাগাভাগি করি। যে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসাবাণিজ্যের সেতুবন্ধ এবং বঙ্গোপসাগরে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির ঠিকানা হবে। আমাদের বিশ্বাস, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীনভাবে বিকশিত এবং মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়াটা গতিশীল ও নিরাপদ গণতন্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অপরিহার্য।’
Like this:
Like Loading...