কল্যাণপুরের যে বাড়িটিতে পুলিশী অভিযানে ৯ জন অভিযুক্ত জঙ্গি নিহত হয়েছে সে বাড়িটি এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘তাজ মঞ্জিল’ নামে ৫৩ নম্বর বাড়িটির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট গত ২০শে জুন ভাড়া নেয় অভিযুক্ত জঙ্গিরা।
তারা পুলিশের সরবরাহকৃত ‘ভাড়াটিয়া ফর্ম’ পূরণ করে জমা দেয় নি।
ছয় তলা এই বাড়িটিকে এলাকাবাসী জাহাজ বাড়ি নামে চিনত। বাড়িটির সম্মুখভাগ দেখতে অনেকটা জাহাজের মত।
সকালে কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটির আশপাশে পৌছানোর সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ।
দেখা গেল, এলাকার অনেক মানুষই পুলিশের সেই নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে এসে ভিড় জমিয়েছে। তারা ‘জাহাজ বাড়ি’ নিয়ে আলোচনা করছে।
বাড়িটি থেকে কয়েকটি ভবন দূরে একটি ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম। তিনি বলছেন, বাড়িটি সবার কাছে পরিচিত। বহু ছাত্র এখানে মেস বানিয়ে থাকত।
বাড়িটির ধারে কাছে কাউকে পৌছাতে দিচ্ছিল না পুলিশ। এমনকি সাংবাদিকদেরও নয়।
এলাকাটি জুড়ে অসংখ্য বহুতল ভবন থাকায় দূর থেকেও সেটি চোখে পড়ছিল না। কয়েকটি ভবনের ছাদে উঠে চেষ্টা করেও ভবনটিকে দেখা গেল না।
পুলিশের বাধা যেখানে শুরু হয়েছে, সেখানেই বহু বছর ধরে মুদি দোকান চালান উত্তম কুমার বণিক।
তিনি বলছেন, সতের বছর আগে সস্ত্রীক ‘জাহাজ বাড়ি’র ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি। ভবনটি কয়েক দশকের পুরণো। প্রথম দিকে সেখানে কোন ব্যাচেলর বা অবিবাহিত কাউকে ভাড়া দেয়া হতো না।
কিন্তু সম্প্রতি তিনি দেখেছেন বাড়িটিতে অনেক ব্যাচেলর কর্মজীবী ও ছাত্রকে ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
মি. বণিক বাড়িটির যে বর্ণনা দিচ্ছেন তাতে ছয়তলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলা থেকে প্রতিটি ফ্লোরে দুই কামরার এবং তিন কামরার করে তিনটি করে ফ্ল্যাট ছিল। আর নিচের ফ্লোরে ছিল ছোট ছোট অনেকগুলো কামরা।
আতিউর রহমান নামে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ভবনটির মালিক – জানালেন মি. বনিক।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, বাড়িটির চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাতে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হত। তারা সেখানে মেস করে থাকত। নিচের তলাগুলো ভাড়া দেয়া হত পরিবার নিয়ে যারা থাকেন তাদের।
দু’একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে ভোরে অপারেশন ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ শুরু করবার আগেই ভবনটির নিচের তলাগুলো থেকে ভাড়াটিয়াদের সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
আজ সারাদিন ধরেই ভবনটি অবরুদ্ধ করে তল্লাশি ও আলামত সংগ্রহ করছিল সিআইডি।
এসময় ভবনটির অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা কি অবস্থায় রয়েছে সে তথ্য জানা যায়নি। ভবনটির যে ফ্ল্যাটে অভিযুক্ত জঙ্গিরা ছিল সেখানকার কিছু ছবি পাওয়া গেছে পুলিশের কাছ থেকে।
তাতে দেখা যাচ্ছে, ফ্ল্যাটটির দেয়ালে অনেক বুলেটের চিহ্ন। মেঝেতে ও সিড়িতে পড়ে আছে গুলির খোসা। আর পড়ে রয়েছে অভিযুক্ত জঙ্গিদের রক্তাক্ত মৃতদেহ।
এদের পরণে কালো পাঞ্জাবি, গলায় স্কার্ফ প্যাচানো। একজনের হাতে একটি ছুরি। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কম্পিউটারের কিবোর্ড, মোবাইলের চার্জার, হেডফোন, অনেকগুলো ব্যাকপ্যাক।
কয়েকটি ব্যাকপ্যাকের উপর একটি কালো পতাকা রাখা, তাতে সাদা অক্ষরে আরবী হরফ লেখা। এই পতাকা ব্যবহার করতে দেখা যায় কথিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটকে।
প্লাস্টিকের একটি র্যাকের উপর রাখা দুটি ড্যাগার, একটি বিদেশী পিস্তল ও একটি চশমার খাপ। আরেকটি কক্ষে আরো অনেকগুলো ব্যাকপ্যাক, ভাঙ্গা ল্যাপটপ, ল্যাপটপের ব্যাগ।
জানালায় একটি কালো পতাকা টানানো, তাতে সাদা অক্ষরে আরবী হরফ লেখা। মেঝেতে পড়ে আছে একটি দা।
পুলিশ পরে এসব কিছুই জব্দ করেছে এবং জব্দকৃত মালামাল হিসেবে প্রদর্শন করেছে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে।