গ্রেপ্তার ফয়জুল্লাহ পুলিশের ‘অভিযানে গুলিতে’ নিহত
মাদারীপুরের কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে থাকা গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিম (১৯) ‘পুলিশের অভিযানের সময় গুলিতে’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল ফয়জুল্লাহকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সদর থানার মিয়ারচর এলাকায় পুলিশ ফয়জুল্লাহকে নিয়ে অভিযানে যায়। ফয়জুল্লাহর সহযোগীরা সেখানে অবস্থান করছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা গুলি ছোড়ে। পুলিশের গাড়িতে গুলি লাগে। এ সময় ফয়জুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
গতকাল শুক্রবার পুলিশ সুপার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল্লাহ বলেছেন যে তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের হামলায় হিযবুত তাহরীরের কোনো সদস্য আটক হওয়ার এটা প্রথম ঘটনা।
গত বুধবার বিকেলে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দীন কলেজের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে তাঁর বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালাতে থাকে। তখন জনতা ধাওয়া করে ফয়জুল্লাহকে আটক করে পুলিশে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় ফয়জুল্লাহসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। বাকি পাঁচ আসামি হলেন সালমান তাকসিন ওরফে আবুল হোসেন ওরফে সালিম (১৯), শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ (২২), জাহিন (২৩), রায়হান (২৪) ও মেজবাহ (২৪)। পুলিশ জানায়, ফয়জুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফয়জুল্লাহর ছবি বরিশালে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষককে দেখানো হয়। তিনি ফয়জুল্লাহকে হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত করেন। হামলায় ফয়জুল্লাহর সঙ্গে অংশ নেন সালিম ও পলাশ। জাহিন, রায়হান ও মেজবাহ বাসার বাইরে পাহারায় ছিলেন।
ঢাকার দক্ষিণখানের বাসিন্দা ফয়জুল্লাহ উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই কলেজের সাবেক এক ছাত্রের মাধ্যমে ফয়জুল্লাহ উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ হন। সংগঠনের নেতাদের নির্দেশে গত শনিবার দক্ষিণখানের বাসা থেকে বের হন ফয়জুল্লাহ। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। এ সময় ঢাকার একটি এলাকায় ফয়জুল্লাহসহ কয়েকজনকে চাপাতি দিয়ে মানুষ হত্যার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যার নির্দেশনা পাওয়ার পর বুধবার ফয়জুল্লাহসহ তিনজন মাদারীপুরে যান। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে তাঁরা মাদারীপুরের টেকেরহাট এলাকায় নিজেদের ব্যবহৃত মুঠোফোনগুলো ফেলে দেন। তারপর মাদারীপুর পুলিশ লাইনস মসজিদে তাঁরা জোহরের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে হামলার উদ্দেশ্যে বের হন। বিকেলে তাঁরা শিক্ষকের বাসায় ঢুকে হামলা চালান।
ফয়জুল্লাহর বাবা ওমর ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে হিযবুত তাহরীর বা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা তিনি জানেন না। তবে ধর্মীয় বইপুস্তক পড়তেন। শিবির ও তাবলিগের বিরুদ্ধে বলতেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তর্ক করতেন। তিনি বলেন, ফয়জুল্লাহ তেমন কারও সঙ্গে মিশতেন না। বেশির ভাগ সময় দরজা বন্ধ করে নিজের কক্ষে থাকতেন। মুঠোফোনে ফেসবুক দেখতেন, এ জন্য বকাও খেয়েছেন।
ওমর ফারুক বলেন, ফয়জুল্লাহ এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তেন। তবে কিছুদিন ধরে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে গিয়ে জুমার নামাজ পড়তেন। একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল, ওই ছেলে দু-একবার বাসায়ও এসেছিল। তবে তার নাম-পরিচয় জানেন না বলে দাবি করেন ওমর ফারুক।
Like this:
Like Loading...