চিনির পর এবার দাম বাড়ল ভোজ্যতেলের
চিনির পর এবার বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম। বাজার দখলে থাকা বড় কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে দুই টাকা করে বাড়িয়েছে।
সয়াবিন তেলের পাশাপাশি বেড়েছে মৌসুমি শাকসবজি, আলু ও ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, বেশির ভাগ সবজি এখন কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কাছাকাছি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি।
অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হালিতে দুই টাকা বেড়েছে। আলু কিনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়তি দিয়ে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের বাজারের বড় অংশের দখল সিটি গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের হাতে। সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের প্রতি ৫ লিটারের বোতলে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ৪৫৫ টাকা, এখন সেটা ৪৬৫ টাকা হয়েছে। এক লিটারের বোতল ৯২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৪ টাকা। সিটি গ্রুপের পরিবেশকেরা জানান, গত সোমবার থেকে নতুন দরের তেল তাঁরা বাজারে ছাড়ছেন।
বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ৪৭০ টাকা। নতুন দর হবে ৪৮০ টাকা। আর ১ লিটারের বোতল ৯৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৯৮ টাকা।
কারওয়ান বাজারে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেলের পরিবেশক আমির হোসেন জানান, আজ রোববার থেকে নতুন দামের তেল বাজারে আসবে। গতকালও পুরোনো দরেই তেল বিক্রি করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে, যার সিংহভাগ আমদানি করে মেটানো হয়। পরিবারগুলো সাধারণত বোতলজাত তেল কিনে থাকে। তেলের দাম বাড়ল কেন, জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সবাই সয়াবিনের দাম বাড়িয়েছে। আমরা এ বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি।’
বিশ্বব্যাংকের দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সয়াবিন তেলের দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। এ সময়ে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৭৯১ থেকে ৭৯৬ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে গড় দাম ছিল টনপ্রতি ৭৪৯ ডলার।
গত সপ্তাহে বাজারে নতুন করে চিনির দাম বাড়েনি। বেশির ভাগ দোকানে প্রতি কেজি চিনি ৭০-৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য গত রমজান মাসের আগে প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা ছিল।
রাজধানীর বাজারে এখন বেশি চাহিদার সবজিগুলোর কেজি ৫০ টাকা বা তার বেশি। শেওড়াপাড়া বাজারে ভালো মানের লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সাধারণ বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা; ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, বরবটি, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর চেয়ে কম দামের সবজির মধ্যে আছে কচুর লতি, কচুমুখি, জালি কুমড়া, কুমড়াসহ কিছু সবজি। এগুলোর দর ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজির খেত ডুবে গেছে। এতে সরবরাহ কমে গিয়ে দাম কিছুটা বেড়েছে। বেশি চড়েছে শাকের দাম।
শেওড়াপাড়া বাজারে গতকাল এক আঁটি লাউশাকের দাম চাওয়া হয়েছে ৩০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি আঁটি লালশাক ২৫ টাকা, মুলাশাক ১৫ টাকা ও কচুশাক ১০ টাকা চাইছিলেন বিক্রেতা। সেখানে শাকের দর-কষাকষি করতে থাকা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, লাউশাকের আঁটি সাধারণত ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে থাকে। এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ।
ঢাকায় তুলনামূলক কম দামে সবজি মেলে কারওয়ান বাজারের আড়তের পাশের ভাসমান দোকানগুলোতে। সেখানেই বিভিন্ন ধরনের সবজি ৩৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা মো. নোমান প্রথম আলোকে বলেন, দাম খানিকটা বেড়েছে। আরও বাড়তে পারে।
কারওয়ান বাজারে আলুর দাম কেজিতে প্রায় ৩ টাকা বেড়েছে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের লাল ডিমের দাম হালিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৩৪ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা শামসুল হক বলেন, ডিমের চাহিদা বেশি। সরবরাহ সে তুলনায় কম। কারণ, ঈদের সময় ভালো দাম পেয়ে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন খামারমালিকেরা। নতুন মুরগির ডিম ছোট, দাম বেশি।
Like this:
Like Loading...