জেনে নিন এলসি খুলতে হলে… কি করতে হবে ?
এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে মূল্য পরিশোধের বা রপ্তানি করে মূল্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হলো ব্যাংক। আর ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি বা বিদেশে পণ্য রফতানির যে প্রক্রিয়া সেটা হলো লেটার অফ ক্রেডিট বা এলসি। সারা পৃথিবীতে এই এলসির মাধ্যমেই সরবরাহকারীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে থাকে। আপনি যদি আমদানিকারক হন তাহলে আপনার জন্য যেটা আমদানি অন্যদিকে সরবরাহকারীর কাছে সেটা রফতানি। ঠিক তেমনিভাবে আপনি রপ্তানিকারক হলে আপনার কাছে যেটা রপ্তানি সেটা অন্যজনের দিকে আমদানি। মূল কথা হল কারো কাছে যেটা আমদানি সেটাই আবার কারো কাছে রপ্তানি।
আমাদের দেশে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী আছেন যাদের ব্যবসায়ে অনেক ভাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এলসি করার নিয়মকানুন না জানার কারণে তাদের উদ্যোগ কুড়িতেই বিনষ্ট হচ্ছে অথবা তারা তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। এমন তরুণ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে এলসি করার নিয়মকানুন সংক্ষেপে এখানে উপস্থাপন করা হল। এলসি করার কাজগুলোকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়।
ধাপ ১: আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন, ভ্যাট এবং আইআরসি (ইমপোর্ট রেজি: সার্টিফিকেট) করতে হবে।
ধাপ ২: কোনো একটি ব্যাংকে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব বা একাউন্ট খুলতে হবে। (এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট শাখা বা এডি শাখায় হিসাব খোলা ভালো। তবে সাধারণ শাখাগুলোতে হিসাব থাকলে যে এলসি করা যাবে না, এমন নয়। তবে সাধারণত ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট শাখা বা এডি শাখায় এলসি করার অভিজ্ঞ কর্মকর্তা থাকেন)
ধাপ ৩: এবার আপনাকে যে পণ্য আপনি আমদানি করবেন তার ইনডেন্ট বা প্রফরমা ইনভয়েস সংগ্রহ করতে হবে। ধরুন আপনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫ টন কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পণ্য আমদানি করবেন। এখন যে কোম্পানির কাছে থেকে আপনি কেমিক্যাল আনবেন তার বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছে গিয়ে প্রতি কেজি দরে কতো দাম তা ঠিক করে একটা ডকুমেন্ট আনবেন। এটাই হলো ইনডেন্ট। কিন্তু যদি ওই কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশে না থাকে তাহলে মেইল করে দাম ঠিক করে একটা ডকুমেন্ট আনতে হবে। এটাকে বলে প্রফরমা ইনভয়েস, সংক্ষেপে পিআই। এই পিআইতে পণ্যের বিস্তারিত বর্ণনা, দাম, পোর্ট অফ শিপমেন্ট ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
ধাপ ৪: এবার ব্যাংকের যে শাখায় আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলেছেন সেই শাখা থেকে লেটার অফ ক্রেডিট ফর্ম সংগ্রহ করে তা ইনডেন্ট বা প্রফরমা ইনভয়েস অনুযায়ী পূরণ করে স্বাক্ষরসহ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আপনি নতুন আমদানিকারক হলে এই ফর্ম পূরণ করার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার সহযোগিতা নিতে পারেন।
ধাপ ৫: এই ধাপে আপনাকে ব্যাংকে পণ্যের মূল্য বা দাম জমা দিতে হবে। একে মার্জিন বলা হয়। প্রথম দিকে আপনাকে পুরো টাকাই ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ধরা যাক, আপনার ৫ টন কেমিক্যালের দাম ১০ হাজার ডলার। তাহলে আপনাকে ১০ হাজার ডলার সমপরিমাণ দেশীয় টাকা (প্রায় ৮ লাখ) আপনার হিসাবে জমা দিতে হবে। তবে আস্তে আস্তে ব্যাংকের সাথে লেনদেন বাড়লে এবং ব্যবসা বাড়লে তখন ১০%-২০% মার্জিন দিয়েও আপনি এলসি করতে পারবেন।
ধাপ ৬: মার্জিন ব্যাংকে জমা দেয়ার সাথে আপনাকে আরো ২টি জিনিস ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ১. সরবরাহকারী কোম্পানির ব্যাংক ক্রেডিট রিপোর্ট এবং ২. ইন্সিওরেন্স কভার নোট (যেকোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ইনডেন্ট বা প্রফরমা ইনভয়েস দেখিয়ে ফি দিয়ে এটা নিতে হয়)। এরপর ব্যাংক আপনাকে এলসির একটা কপি দেবে এবং ওরিজিনাল এলসি কপি সরবরাহকারীর কাছে পাঠিয়ে দেবে। এভাবে আপনার পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকে গিয়ে এলসি করতে হবে।
Like this:
Like Loading...