দেশি ঋণেই হবে ফোরজি, অনেক তথ্য দেয়নি অপারেটররা
স্থানীয় ব্যাংক ঋণের টাকাতেই দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এতে করে সরকারের ফোরজিকে কেন্দ্র করে বড় বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম নিলামের আবেদনে নিজেদের এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।
এদিকে আবেদনে অনেক তথ্যই দায়সারাভাবে উপস্থাপন করেছে অপারেটরগুলো। এখন পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ, নেটওয়ার্ক বিস্তার ও সেবা সংক্রান্ত পরিকল্পনা, মূল কোম্পানির অনুমোদনপত্র, স্থানীয় ও বিদেশি কর্মীদের সংখ্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কাগজপত্রসহ সুস্পষ্ট তথ্য দেয়নি।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আবেদনের বিষয়টিকে অপারেটরগুলো খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। দায়সারাভাবে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে মাত্র।
ওই কর্মকর্তার মতে, নতুন করে কোনো অপারেটর ফোরজি সেবা দিতে আগ্রহী হয়নি। দেশি বা বিদেশি কোনো উদ্যোক্তা এগিয়ে আসেনি। এ কারণে বর্তমান সেবা দাতা মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বুঝতে পেরেছে, তাদেরকেই যোগ্য ঘোষণা ছাড়া কমিশনের সামনে আর কোনো পথ নেই।
এ কারণে আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি বেশ কিছু অসঙ্গতির মধ্যেও শেষ পর্যন্ত সব আবেদনকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন।
আরেক কর্মকর্তা জানান, এমনকি কয়েকটি অপারেটরের কাছ থেকে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় আবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে আনতে হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে কমিশনের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অপারেটরগুলো যে তথ্যই দিক, সবগুলোকে ফোরজির জন্য যোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
বিটিআরসি সুযোগ রাখার পরেও নতুন কোনো অপারেটর আবেদন না করাতেই এমন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমবার পাস হওয়া ফোরজি নীতিমালায় স্পস্ট বলা ছিল ফোরজির বিনিয়োগের জন্য বিদেশি কোম্পানিদেরকে শেয়ার অনুপাতে পুরোটাই বিদেশ মুদ্রা বিনিয়োগ করতে হবে। পরে অপারেটরদের দাবির মুখে এই ধারা তুলে নেওয়া হয়।
আবেদনে বিভিন্ন তথ্যের বিষয়ে বিটিআরসির সূত্র বলছে, গ্রামীণফোন চলতি আয় এবং ব্যাংক ঋণ থেকে বিনিয়োগ করবে। অন্য দুই বড় অপারেটর পুরোটাই স্থানীয় ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।
যাচাই বাছাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, অপারেটরগুলোকে মূল কোম্পানি থেকে বিনিয়োগের সম্মতিসূচক একটি পত্র আনতে বলা হয়েছিল। তবে কেউই তা দেয়নি। বরং তারা স্থানীয় বোর্ডের চিঠি জমা দিয়েছে।
তাদের কাছে নেটওয়ার্ক বিস্তার এবং সেবা সংক্রান্ত পরিকল্পনা জানতে চাইলেও কেউ সঠিকভাবে তা দেয়নি।
অপারেটরগুলো শুরু থেকে এ পর্যন্ত কতো টাকা টাকা বিনিয়োগ করেছে তার প্রমাণসহ তথ্য চাওয়া হলেও কেউ কোনো প্রমাণপত্র দেয়নি বলেও জানিয়েছেন বিটিআরসির ওই কর্মকর্তা।
“সরকার অল্প সময়ের মধ্যে ফোরজি সেবা চালু করার জন্য বদ্ধ পরিকর। আর সেটাকেই নিজেদের সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অপারেটগুলো। ফলে তাদের ইচ্ছে মাফিক দাবি আদায় করে নিতে পারছেন অপারেটররা। আর এমন গুরুত্বহীন আবেদনও সে কারণেই,” বলেন ফোরজি লাইসেন্স প্রদাণ সংক্রান্ত কমিটির একজন।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি সিটিসেলসহ সেবায় থাকা সবগুলো অপারেটর ফোরজি সেবা দেওয়ার লাইসেন্স পেতে আবেদন করে।
মার্চের মধ্যে গ্রাহকরা ফোরজি’র সেবা পাবেন বলেও আশা করছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
Like this:
Like Loading...