আজকের বাংলা তারিখ
  • আজ শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
  • ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৯:৫২

পরিবার–বিচ্ছিন্ন ছিলেন তাঁরা

রাজধানীর কল্যাণপুরে ঝোড়ো অভিযানে নিহত নয় ‘জঙ্গি’র মধ্যে সাতজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের তিনজন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। অন্যদের বাড়ি দিনাজপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল বুধবার রাতে তাঁদের পরিচয় জানিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি ও তথ্য প্রকাশ করেছে।
নিহত সাতজনই পরিবার থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন ছিলেন। বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে পরিবার থেকে জানা গেছে।
ঢাকার তিন বাসিন্দা হলেন শেহজাদ রউফ ওরফে অর্ক, তাজ-উল-হক রাশিক ও আকিফুজ্জামান খান। মার্কিন নাগরিক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেহজাদ ছিলেন গুলশানে হামলাকারী নিহত নিবরাস ইসলামের বন্ধু। ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ছাড়েন শেহজাদ। একই দিনে বাড়ি ছেড়েছিলেন নিবরাস ও তাঁদের আরেক বন্ধু তাওসিফ হোসেন। ৬ ফেব্রুয়ারি শেহজাদের বাবা তৌহিদ রউফ ভাটারা থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন।
গতকাল বিকেলে শেহজাদের বাবা তৌহিদ রউফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যান। তবে ছেলের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। লাশ দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।’
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনি এসে ডেডবডি দেখেছেন। ছেলের নাকে তিল এবং কানটা একটু বাঁকা। এই লাশেরও তা রয়েছে। তবে সন্দেহ করেছেন যে, ছেলেকে শুকনো মনে হচ্ছে।’
শেহজাদ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের একটি ১০তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ওই ভবনের দারোয়ান আশরাফুল আলম বলেন, ‘ফ্ল্যাটে কেউ নেই। শুধু একজন বয়স্ক কাজের মহিলা আছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেহজাদের মা ৮-১০ বছর আগে মারা গেছেন। বাসায় শেহজাদ ও তাঁর বাবা থাকতেন। তাঁর দুই বোন বিবাহিত। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিবিএ শেষ করে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএতে ভর্তি হন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন।
দারোয়ান আশরাফুল বলেন, বেরিয়ে যাওয়ার সময় শেহজাদের সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল। পরনে ছিল শার্ট ও জিনসের প্যান্ট। শেহজাদ এলাকায় ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তবে মাগরিবের নামাজের সময় বাইরে যেতেন।
নিহত তাজ-উল-হক রাশিকের বাসা ধানমন্ডিতে। বাবার নাম রবিউল হক। সূত্রগুলো বলছে, রাশিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগ থেকে পাস করেন। চট্টগ্রামে চাকরি হয়েছে জানিয়ে বাসা ছাড়েন এ বছরের ১৬ এপ্রিল। মাঝেমধ্যে অপরিচিত নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করতেন। ঈদের দুই দিন পর শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁকে বাড়ি ফিরে আসার জন্য বহুবার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। ১৯৯১ সালে জন্মের পর রাশিক যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০২ সালে ঢাকায় ফিরে একাডেমিয়ায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ‘ও’ লেভেল ও পরে মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করেন।
নিহত আকিফুজ্জামান খানের বাড়ি গুলশানে। তাঁর বাবার নাম সাইফুজ্জামান খান। আকিফুজ্জামান টার্কিশ হোপ স্কুলে পড়তেন। তাঁর গুলশানের বাসভবনে গেলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। ওই এলাকার এক গাড়িচালক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, আকিফ নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। দেখা হলেই সালাম দিতেন।
নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় থাকা নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন গত ২৫ মে রাতে নিখোঁজ হন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুধারাম থানার পশ্চিম মাইজদীতে। জোবায়েরের বাবা আবদুল কাইয়ুম ১২ জুলাই সুধারাম থানায় জিডি করেছিলেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জোবায়ের ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, জোবায়েরের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলা রয়েছে। আবদুল কাইয়ুম বলেন, তাঁর ভাতিজা খালেদ মোহাম্মদ আলী ওরফে বাহাদুরের মাধ্যমে জোবায়ের ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তবে কোনো পদে ছিলেন কি না, তা তিনি জানেন না।
কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বাড়ির’ ভাড়াটে একটি পরিবারের সদস্যরা গতকাল সকালে বাসায় যেতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। গত মঙ্গলবার ওই বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষ হওয়ার পর ভবনটির সবাইকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয় l ছবি: প্রথম আলোজোবায়ের নিখোঁজ হওয়ার ২০ দিন আগে থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তাঁর চাচাতো ভাই খালেদ মোহাম্মদ আলী ওরফে বাহাদুর (৪৫)। এ ঘটনায় ১৪ জুলাই একই থানায় জিডি করেন বাহাদুরের স্ত্রী শাহিদা আক্তার। বাহাদুর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান তাঁর চাচা নুরুল আমিন। তিনি বলেন, তাঁর বড় ভাই জয়নাল আবদিন মুসলিম লীগ করতেন এবং রাজাকার ছিলেন। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁকে মেরে ফেলা হয়। অবশ্য বাহাদুরের বড় ভাই মো. বাদল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল দুপুরে জোবায়েরের গ্রামের বাড়িতে মা আয়েরা বেগম ওরফে কমলা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টেলিভিশন ও ফেসবুকে প্রচার হওয়া ছবির সঙ্গে জোবায়েরের মিল আছে। গতকালই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নোয়াখালী থেকে জোবায়েরের বাবা ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছেন।
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, নিখোঁজের জিডি হওয়ার পর থেকেই জোবায়েরের বিষয়টি তাঁদের সন্দেহের মধ্যে ছিল। সেভাবেই তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। বাহাদুর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় থাকা সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমানের (২৩) গ্রামের বাড়ি তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেবেন বলে বাড়ি ছাড়েন মতিয়ার। এর আগে আরও পাঁচ-ছয় বছর তিনি ঢাকায় ছিলেন। মাঝখানে পাঁচ মাস সাতক্ষীরায় থেকে আবারও চলে যান। বাড়িতে জানান, তিনি একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়েছেন ও গাজীপুরে খালার বাড়িতে থাকছেন। মতিয়ারের বাবা নাসিরউদ্দিন সরদার বলেন, ‘১০-১৫ দিন আগে এক লোক আমাকে বলে তোমার ছেলে জঙ্গিতে নাম লিখিয়েছে।’
তবে ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এলাকায় তার কোনো কর্মকাণ্ড ছিল বলে আমাদের জানা নেই।’ প্রতিবেশীরা বলেছেন, বাবা-ছেলে দুজনই বিএনপি করতেন।
আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে মতিয়ার বেশি দূর লেখাপড়া করেননি। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন।
নিহত আবদুল্লাহর বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের বল্লভগঞ্জ গ্রামে। বাবার নাম মো. সোহরাব আলী। গত এক বছর বাড়ি আসেননি, ফোনে কথা বলতেন। স্বজনেরা জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আবদুল্লাহর নাম ছিল মোতালেব। এরপর পরিবারের লোকজন ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। তখন থেকে নতুন নাম হয় আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দেবই কাজিরবাগ আলিম মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর আর বাড়ি থেকে টাকা নিতেন না। বাসার লোকজনকে জানিয়েছিলেন, তিনি নৌবাহিনীতে চাকরির চেষ্টা করছেন। তাঁর বড় ভাই নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওর লাশ বাড়িতে ঢুকতে দেব না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল্লাহ ও তাঁর পরিবারের সবাই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পড়তে আসার আগে আবদুল্লাহ হাকিমপুরের এতিমখানায় হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও পরে নওগাঁর সাপাহারের একটি মাদ্রাসায় পড়েছেন।
নিহত অপর জঙ্গির নাম আবু হাকিম নাইম। নুরুল ইসলামের ছেলে আবু হাকিম নাইমের বাড়ি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নোয়াখালী থেকে মাহবুবুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে কল্যাণ ব্যানার্জি, দিনাজপুর থেকে আসাদুল্লাহ সরকার।

MY SOFT IT Wordpress Plugin Development

Covid 19 latest update

# Cases Deaths Recovered
World 0 0 0
Bangladesh 0 0 0
Data Source: worldometers.info

Related News

সানির ব্যাটারি বিপ্লব

সানি সানওয়ার কাজ করেন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার। ...

বিস্তারিত

অনলাইনে ব্যবসা করতে চান?

ধরুন আপনার অসাধারণ কিছু প্রোডাক্ট আছে। খুব সুন্দর করে কন্টেন্ট তৈরী করে নিজের ওয়েবসাইট সাজিয়েছেন। পণ্যের ছবি ...

বিস্তারিত

হলোগ্রাফি এবং পদার্থবিজ্ঞানের মেসি

আজকে যে বিষয়টা দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই, সেই ধারণাটার জন্ম স্ট্রিং তত্ত্ব থেকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এর ...

বিস্তারিত

ফেসবুক ছাড়ার বার্ষিক গড় মূল্য ১ হাজার ডলার

ফেসবুক ব্যবহারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি প্রায় সবাই জানেন। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের ...

বিস্তারিত