ববিতা আপা নিজ হাতে মেকআপ করিয়ে দিলেন : পূর্ণিমা
প্রেম
আমি তখন সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বিসিএসআইআর স্কুলে ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তখন একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করত। প্রথম দিনের ঘটনা বলি, স্কুল ছুটির পর একা একা বাসায় ফিরছি, দেখি একটি ছেলে আমাকে অনুসরণ করছে। সেদিন কিছুই বুঝতে পারিনি। পরদিন স্কুল ছুটির পর দেখি, ছেলেটি স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিদিনই সে ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকত।
আরেকদিন স্কুল ছুটির পর একা হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। ছেলেটি পিছু পিছু এসে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইল। আমি বললাম, ‘বলেন।’ ছেলেটি বলল, ‘তোমাকে আমার ভালো লেগেছে।’ শুনে আমি ভয়ে দৌড় দিই। বাসায় গিয়ে মাকে বলি। পরদিন থেকে খালাতো ভাই বা বোন যেকোনো একজন স্কুল ছুটির পর আমাকে নিতে আসা শুরু করল। এরপরও ছেলেটি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত। আমারও ছেলেটিকে ভালো লাগত। যেহেতু আমার সঙ্গে কেউ না কেউ থাকত, সে জন্য ছেলেটি আর আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত না। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর খেয়াল করলাম, ছেলেটি আর আসছে না। যে জায়গাটিতে সে দাঁড়িয়ে থাকত, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় মনের অজান্তেই জায়গাটিতে চোখ চলে যেত। ছেলেটির নামটাও জানার সুযোগ হয়নি!
ক্যামেরার সামনে
১৯৯৭ সালের জুন মাস। দিনটার কথা মনে নেই। আমার প্রথম চলচ্চিত্র এ জীবন তোমার আমার-এর শুটিং শুরু হয়েছে। শুটিংয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম গুলশানের একটি লোকেশনে। ওই দৃশ্যে আমার সঙ্গে ছিলেন অভিনয়শিল্পী ববিতা ও ফারুক। শুটিংয়ের আগের দিন পরিচালক জাকির হোসেন রাজু আমাকে নিয়ে গেলেন ফারুক ভাইয়ের বাসায়। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হলো। অনেকক্ষণ কথা হলো। শুটিং সন্ধ্যায় কিন্তু সকালে আমাকে ববিতা আপার বাসায় নিয়ে গেলেন পরিচালক। সারা দিন তাঁর সঙ্গে থাকলাম। ববিতা আপা নিজ হাতে আমাকে মেকআপ করিয়ে দিলেন। চিত্রনাট্য আগেই পেয়েছিলাম। প্রথম দৃশ্যে আমার সংলাপ ছিল এক পাতার মতো। পরীক্ষার পড়ার মতো মুখস্থ করে ফেলেছিলাম সংলাপগুলো। দৃশ্যধারণ শুরু হলো। আমি নিজের মতো করে সংলাপ বলে যাচ্ছিলাম। দৃশ্যটি শেষ হয়েছে কি না, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ চারপাশ থেকে করতালির শব্দ কানে এল। বুঝতে পারলাম, দৃশ্যটি শেষ হয়েছে এবং তা এক শটেই ‘ওকে’ হয়ে গেছে।
অটোগ্রাফ দেওয়া
সখীপুর আনসার ক্যাম্পে আমার প্রথম ছবির গানের শুটিং চলছিল। সহশিল্পী রিয়াজ। তখন চলচ্চিত্রে মোটামুটি পরিচিত মুখ তিনি। শুটিংয়ের ফাঁকে আমি, রিয়াজ ও পরিচালক বসে আছি। দেখলাম, একজন এসে রিয়াজের কাছে অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। এরপর আমার কাছে এসেও অটোগ্রাফ চাইলেন। আমি তো ঘাবড়ে গেলাম। কীভাবে অটোগ্রাফ দিতে হয়, কী লিখতে হয়, তা আমার জানা নেই। ডায়েরি-কলম হাতে নিয়ে বিপদে পড়ে গেলাম। পাশ থেকে রিয়াজ বললেন, ‘লিখে দাও, অনেক অনেক ভালোবাসা, ভালো থেকো। নিচে নিজের সিগনেচার দিয়ে দাও।’ কিন্তু কীভাবে সিগনেচার দিতে হয়, তা-ও জানি না। নিজের আসল নামে, নাকি সিনেমায় দেওয়া নামে সিগনেচার দেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যেহেতু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অটোগ্রাফ, তাই সিনেমার দেওয়া পূর্ণিমা নামটিই লিখেছিলাম।
প্রথম পারিশ্রমিক
প্রথম ছবিতে অভিনয়ের জন্য এক লাখ কিংবা নব্বই হাজার টাকার মতো পেয়েছিলাম। সঠিক অঙ্কটা এখন মনে করতে পারছি না। তবে মনে আছে, চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় অগ্রিম পনেরো হাজার টাকা পেয়েছিলাম। পারিশ্রমিকের টাকা আমি নিজে হাতে নিইনি। এই ব্যাপারগুলো মা দেখতেন। তখন বয়সও বেশি ছিল না। যা কিছু প্রয়োজন হতো, মায়ের কাছ থেকেই পেতাম।
প্রথম পড়া বই
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন ‘চাচা চৌধুরী’ কমিক পড়তাম। এতটাই নেশা ছিল যে, আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবীর বাসা থেকে চেয়ে এনে পড়তাম। একসময় হুমায়ূন আহমেদের নাটকের প্রেমে পড়ে গেলাম। যেদিন তাঁর নাটক থাকত, আগেই স্কুলের পড়া শেষ করে টেলিভিশনের সামনে বসতাম। তারপর থেকে প্রচুর হুমায়ূন আহমেদ লেখা পড়েছি।
Like this:
Like Loading...