মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় সর্বস্তরে স্বস্তি
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মামলার স্বাক্ষীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষ, গণজাগরণমঞ্চ ও মামলার সাক্ষীরা।
অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে যেকোনো দিন তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বিচারকার্যটি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু আদালত রায় বহাল রাখায় স্বস্তি প্রকাশ করা যাচ্ছে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এ রায় অসামান্য বিজয়। এটি শুধু প্রসিকিউশনের নয়, মানবসভ্যতার বিজয়। এ রায়ের মাধ্যমে সারাদেশে আলো ছড়িয়েছে। এ রায়ে তিনি খুবই খুশি।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল আছে, এটি কতটা আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশের নয়। পাঁচ মাস ধরে রিভিউ খারিজের অপেক্ষায় ছিলাম। আর কোনো যুদ্ধাপরাধীর এতো সময় লাগেনি। মীর কাসেম তার অর্থ-বিত্ত, প্রভাব ব্যবহার করে রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। জাতি গভীর শঙ্কায় ছিল এ রায় নিয়ে। তার ফাঁসি বহাল থাকায় জাতির শঙ্কা দূর হলো।
এদিকে এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার সাক্ষীরাও। মীর কাসিমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যা মামলায়। মুক্তিযোদ্ধা জসিমের মামাতো বোন মামলার সাক্ষী চট্টগ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা হাসিনা খাতুন বলেন, সঠিক বিচার হয়েছে। এখন আমি খুব খুশি। আমার ভাই জসিমকে সে (মীর কাসেম) ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পরই জসিমকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। রায় দ্রুত কার্যকর চাই।
‘একবার না, ১৪ বার ফাঁসি হওয়া উচিত’ মন্তব্য করে মামলার সাক্ষী চট্টগ্রাম নগরের হাজারিগলি এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ় মৃদুল দে। তিনি বলেন, হাজারিগলি হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা। একাত্তরে মীর কাসেম আলী এই এলাকাকে টার্গেট করে। আমার চোখের সামনে টুন্টু দাস ও রঞ্জিত দাসকে ডালিম ভবনে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের হত্যা করে। বিচারে আমরা খুশি। তার (মীর কাসেম) একবার না, ১৪ বার ফাঁসি হওয়া উচিত।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার আরেক সাক্ষী সৈয়দ এমরান বলেন, আমাদের ৬ ভাইকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আটকে রেখেছিল মীর কাসেমের আলবদর বাহিনী। সেখানে তারা আমাদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। এ রায়ে আমি অত্যন্ত খুশি। রায় যত দ্রুত কার্যকর হবে, ততই বাংলার মানুষ খুশি হবে ও শহীদের আত্মা শান্তি পাবে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
রিভিউ আবেদনই মীর কাসের আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ। প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়টি নিস্পত্তি হলে যে কোন সময়ই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামীদের মধ্যে যারা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছিলেন তাদের সাজা মওকুফ করেননি রাষ্ট্রপতি।
Like this:
Like Loading...