যে গুলশানের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল
রাজধানীর গুলশানের ‘হলি আর্টিসান বেকারি’ রেস্টুরেন্টে জিম্মিদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ চৌকস দল। সেনা কম্যান্ডোরা স্পটে এসে পেঁৗছানোর পর এই অভিযান শুরু হয়।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাতে সন্ত্রাসীদের হামলার পর সৃষ্ট এ সংকটের অবসানে শনিবার (২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৭টায় দায়িত্ব নেয় দলটি। তাদের সঙ্গে অংশ নেয় র্যাব, পুলিশ, সোয়াট, বিজিবিসহ অন্য বাহিনীও।এরপর সকাল পৌনে আটটার দিকে স্পট থেকে ভেসে আসতে থাকে টানা গুলির শব্দ। গুলির পাশাপাশি, গ্রেনেডের শব্দও আসতে থাকে। বেলা ৭টা ৫০ মিনিটের মধ্যে অনেকটাই ভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যায় কমান্ডোরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার কিছু আগে সেনাবাহিনীর ১১টি এপিসি, ১৬টি জিপ ও ৩টি ভ্যানসহ বেশ কিছু সাঁজোয়া যান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে।আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চিহ্নিত এলাকার বাইরে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় মিলিটারি পুলিশকে। এরপর একে একে বাড়তে থোকে সেনা সদস্যের সংখ্যা।
এর আাগে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে তাদেরকে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে আনা হয় দুইজনকে। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে একজন দিয়েগো স্তেন। তিনি রেস্টুরেনটিতে শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপরজন বাংলাদেশি নাগরিক বেলারুশ। তিনি রেস্টুরেন্টের স্টাফ।
সোয়াত সদস্যরা তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসে। তবে তারা মূল রেস্টুরেন্টের ভেতরে ছিলেন না, যেখানে অন্যরা অস্ত্রধারীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন।
একজন পুলিশ সদস্য জানান, উদ্ধার করা দুজনের মধ্যে বাংলাদেশি ব্যক্তি কিছুটা আড়াল হয়ে গেটের কাছাকাছি আসা মাত্রই সোয়াত সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। অন্যদিকে স্পেনিশ নাগরিক ভবনের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে দেখে ইশারায় এগিয়ে আসতে বলে পুলিশ সদস্যরা। কিছুটা কাছাকাছি আসা মাত্র তাকেও কম্পাউণ্ডের ভেতর থেকে তুলে নিয়ে আসে পুলিশ।
এদিকে রেস্টুরেন্টের ভেতরে অস্ত্রধারীদের হাত থেকে যখন জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তখনই সেই রেস্টুরেন্টের পাশের পুকুর পাড়ে এক যুবককে সন্দেহজনকভাবে চলফেরা করতে দেখা যায়। তাকে ডাকা হলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই গুলি করে তাকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ওই যুবকের বুকে গুলি লেগেছে। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
অস্ত্রধারীরা যাতে রেস্টুরেন্টের পাশে থাকা লেক দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য নৌ বাহিনীর একটি কমান্ডো টিম মোতায়েন করা হয়েছে। সাথে রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের টিমও। রাতে তাদের স্পট লাইট বসানো হয়। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
ভেতরের অস্ত্রধারীদের আত্মসর্পণের জন্যও বারবার আহ্বান করা হয়। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। তারা আত্মসর্পণ না করলে যৌথবাহিনীর বিশেষ টিম পূর্ণাঙ্গ অভিযান চালাবে।
এ প্রসঙ্গে ডিবির (উত্তর) ডিসি শেখ নাজমুল আলম বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, জিম্মি হওয়া লোকদের উদ্ধারে সকালের দিকে অভিযান শুরু হবে।’
এর আগে অস্ত্রধারীদের হামলায় ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। ওই রেস্টুরেন্টে গোলাগুলির সময় তারা গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয় তাদের। সেখানেই প্রথমে ওসি সালাউদ্দিন এবং পরে এসি রবিউল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। গোলাগুলির সময় তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Like this:
Like Loading...