প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। এখন পর্যন্ত একমাত্র সঞ্চয়পত্র ছাড়া লাভজনক বিনিয়োগের আর কোনো পথ খোলা নেই তাঁদের সামনে। বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সাধারণ মানুষের বাড়তি আয়ের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
ব্যাংকের বাইরে শেয়ারবাজার ছিল সাধারণ বিনিয়োগের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। কিন্তু ২০১০ সালের ধসের পর থেকে সেই শেয়ারবাজার প্রাণহীন। বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতার কারণে মন্দার কবল থেকে বেরোতে পারছে না শেয়ারবাজার। তাই আপাতত সঞ্চয়পত্রেই লাভ বেশি। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে এখন ১১ থেকে পৌনে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দেওয়া হয়। তবে যেকোনো মুহূর্তে সেটিও কমে যেতে পারে।
২ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে উৎসাহিত করার মতো কোনো সুখবর নেই। আর তাতে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মর্জিয়া বেগমদের মতো সাধারণ চাকরিজীবীদের মাথায় হাত।
ব্যাংক ও কোন শাখায় কর্মরত সেটি প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর বাসিন্দা মর্জিয়া বেগম বলেন, এক হাজার টাকার মাসিক কিস্তির পাঁচ বছর মেয়াদি ভবিষ্যতের একটি সঞ্চয় প্রকল্প রয়েছে তাঁর। যখন হিসাবটি খোলা হয়, তখন ব্যাংক জানিয়েছিল মেয়াদ শেষে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো সুদ পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন আর সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের সুদের হার কমে নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশে, ২০১৫ সালের এপ্রিলেও যা ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। আর ২০১৪ সালে ব্যাংক খাতের আমানতের সুদের হার ছিল ৮ শতাংশের ওপরে। সেই হিসাবও গত তিন বছরে ব্যাংকে কেউ টাকা জমা রাখলে তার বিপরীতে সুদ প্রাপ্তি ধারাবাহিকভাবে কমেছে।
মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার এখন নেতিবাচক। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা জমা রেখে তা থেকে প্রকৃত অর্থে কোনো বাড়তি আয় হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিসিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে পর্যন্ত) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির গড় দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেখানে গত এপ্রিল শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক খাতে আমানতের যে সুদের হার, তা মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম। তার মানে, ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃত অর্থে কোনো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। এটি কাম্য নয়। তাই আমানতের সুদের হার অন্তত মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। সেটি করতে গিয়ে যাতে ঋণের সুদের হার বেড়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গত কয়েক দিনে সাধারণ চাকরিজীবী, অবসর ভাতাভোগী সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়তি কিছু আয়ের আশায় এ দেশের সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই তাঁদের সঞ্চয়ের অর্থ গচ্ছিত রাখেন ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে। আর সীমিতসংখ্যক মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এ তিন ক্ষেত্রের কোথাও সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নেই।
বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মাসুদ খান বলেন, সাধারণ মানুষের সঞ্চয়কে উৎসাহিত করার মতো কোনো ঘোষণা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। বরং সঞ্চয়কারীদের মধ্যে যাঁরা নিয়মিত করদাতা, তাঁদের ওপর করের চাপ বাড়ানো হয়েছে। ফলে দুই দিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে অনেককে। বিপুল এক জনগোষ্ঠীকে এই বাজেট উভয়সংকটে ফেলেছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সাধারণ মানুষ ও অবসরকালীন ভাতাভোগীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগটাই লাভজনক। এ দেশের বিপুল পরিমাণ অবসরকালীন ভাতাভোগীদের বিনিয়োগের জন্য পেনশনার সঞ্চয়পত্রসহ একাধিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে। অনেকে সঞ্চয়পত্রের আয় দিয়ে পরিবার চালান। এর বাইরে তাঁদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের আর কোনো ব্যবস্থা নেই।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজারে পেনশনধারীদের জন্য নিরাপদ এবং বছর শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের মুনাফার নিশ্চয়তা সংবলিত মিউচুয়াল ফান্ড চালুর সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে বর্তমান শেয়ারবাজার কোনোভাবেই অবসরকালীন ভাতাভোগীদের জন্য নিরাপদ নয়। সার্বিকভাবেও শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো না। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী মানুষের একমাত্র সঞ্চয়পত্র ছাড়া আর কোথাও লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ নেই।
এদিকে, ব্যাংকের সুদের হার কমতে থাকায় সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন এখন সবাই। ফলে বিক্রিও বাড়ছে। তাই সরকারকে শেষ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও বদলাতে হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সব শেষ হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ২৬ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু ১০ মাসেই সেখানে প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার, যেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুধু এপ্রিল মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার।
# | Cases | Deaths | Recovered |
---|---|---|---|
World | 0 | 0 | 0 |
Bangladesh | 0 | 0 | 0 |
Data Source: worldometers.info |
সানি সানওয়ার কাজ করেন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার। ...
বিস্তারিতধরুন আপনার অসাধারণ কিছু প্রোডাক্ট আছে। খুব সুন্দর করে কন্টেন্ট তৈরী করে নিজের ওয়েবসাইট সাজিয়েছেন। পণ্যের ছবি ...
বিস্তারিতআজকে যে বিষয়টা দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই, সেই ধারণাটার জন্ম স্ট্রিং তত্ত্ব থেকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এর ...
বিস্তারিতফেসবুক ব্যবহারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি প্রায় সবাই জানেন। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের ...
বিস্তারিত