ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্র্যাফ) প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৬ সালের শুরুর দিকে। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও চ্যাট, ব্যক্তিগত ছবির আদান-প্রদান বাড়ছিল। ঘটছিল নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পরিস্থিতি যেন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছিল আয়ত্তের বাইরে। সেই সময়টাতে একদল তরুণ উদ্যোগ নেন সাইবার জগতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হওয়া মানুষকে সহায়তা করার। একই সঙ্গে যেকোনো সাইবার অপরাধ প্রতিহত করার জন্য জনগণকে সেবা দেওয়া ও সচেতন করার উদ্যোগও নেন তাঁরা। সেই উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন জেনিফার আলম ও মিনহার মহসিন উদ্দিন।
১২ ডিসেম্বর কথা হলো ক্র্যাফের প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রশিক্ষক জেনিফার আলমের সঙ্গে। জেনিফার আলম জানালেন, ক্র্যাফ বর্তমানে একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এবং বিনা মূল্যে কারিগরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। নানা পেশার কিছু স্বেচ্ছাসেবীও রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে।
ক্র্যাফ কী করে?
কিছুদিন আগে ক্র্যাফের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন এক দম্পতি। জেনিফার বলেন, ‘তাঁদের ফোন বাসা থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল। ফোনে থাকা দম্পতির কিছু ছবি ও ভিডিও নিয়ে ভুয়া আইডি বানিয়ে বিভিন্নভাবে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। মোটা অঙ্কের টাকাও দাবি করা হচ্ছিল। সেই দম্পতি কিছু অর্থও দেন। টাকার দাবি বাড়তে থাকে। কিন্তু ছবি ও ভিডিও ঠিকই ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ এ অভিযোগ পাওয়ার পর ক্র্যাফ অপরাধীদের আইডি শনাক্ত করে র্যাবকে তথ্য দেয় এবং তারা ধরা পড়ে।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বান্ধবীর গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে বান্ধবীর এক আত্মীয়ের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন। পরিবারের চাপের মুখেও নির্ভীক শিক্ষার্থী নতি স্বীকার না করে ক্র্যাফে সেই লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ক্র্যাফ দল মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত সেই লোকের কর্মক্ষেত্রে যায়, কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে। পরে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আরেকটি কেসের কথা জানালেন জেনিফার আলম। একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীর মোবাইল ফোনে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা খুঁজে পান। ফল, স্বামী- স্ত্রীর ঝগড়া, ঝগড়া থেকে হাতাহাতি। স্বামী ক্র্যাফে অভিযোগ জানালে তাঁর মোবাইল নম্বর এবং যে নম্বর থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে তা অনুসরণ করা হয়। ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখা যায় ওয়েব মাস্কিং প্রয়োগ করে এসব মেসেজ পাঠানো হয়েছিল। পরে অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সাইবার অপরাধ নিয়ে চলে গবেষণা
ক্র্যাফের রয়েছে একটি অলাভজনক সেবামূলক ইনস্টিটিউট। এটিতে বিভিন্ন ধরনের সাইবার-সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করে এবং সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ নিয়ে গণসচেতনতার কাজও করে ক্র্যাফ। ক্রাফ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে।
ক্র্যাফের সদস্যরা মনে করেন, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়িয়ে সাইবার অপরাধ ৬০ শতাংশের মতো কমিয়ে আনা সম্ভব। কারণ গণসচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। তাই ক্র্যাফ যেকোনো মুহূর্তে সব ধরনের কারিগরি সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।