বাতাসে উড়ছে তাঁর চুল। প্রখর রোদে পুড়ছে মুখ। মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন জেনিথ ইরফান। ২০ বছরের এই পাকিস্তানি তরুণী ইতিমধ্যে দেশটির উত্তরাঞ্চলে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার রাস্তা মোটরসাইকেলে ভ্রমণ করে ফেলেছেন। লক্ষ্য আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে চান পুরো পৃথিবী। না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া তাঁর বাবাও দেখতেন এমন স্বপ্ন।
পাকিস্তানের আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো নন জেনিথ। নারীরা কেমন হবেন, কী করবেন—এসব নিয়ে গৎবাঁধা যে ধারণা আছে, তা থেকে বেরিয়ে ১৮ বছর বয়সেই মোটরসাইকেল চালানো শিখে নেন তিনি। জেনিথ বলেন, ‘২০১৩ সালে যখন আমার ভাই বাসায় মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন, তখন থেকেই তিনি আমাকে চালানো শেখান। তখনই আমি মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
জেনিথ বলেন, তিনি মায়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁর বাবার মোটরসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণের খুব ইচ্ছে ছিল। এরপর থেকে জেনিথ বাবার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
২০১৫ সালের জুনে প্রথমবার মোটরসাইকেলে একাকী ৭০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে কাশ্মীর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন জেনিথ। পরে আগস্টে ভাই ও চার বন্ধুর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের আরও শহর, পার্বত্য এলাকা ও লেকের আশপাশে ভ্রমণ করেন।
ভ্রমণে বেরিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে জেনিথের। অনেকে তাঁর এই সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। অনেকে তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হতে চেয়েছে।
তবে মাঝেমধ্যে ভিন্ন অভিজ্ঞতাও হয়েছে জেনিথের। একবার ভাইকে নিয়ে পার্বত্য শহর চিলাসে ভ্রমণে বেরিয়েছেন তিনি। পথে ভাই তাঁকে বললেন কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে নিতে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে তিনি মেয়ে। এতে কেউ বাধা দিতে পারে। পুরো এলাকা মুখ ঢেকে ভ্রমণ করেন জেনিথ। তিনি বলেন, ‘পথে দেখতে পেলাম অনেক শিশু পাথর হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আমাদের থামিয়ে পরীক্ষা করতে চাইছিল।’
নিজের দেশে জেনিথ অন্য অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। পরিণত হয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীকে। জেনিথ বলেন, অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের ওপর আস্থা রাখা। তাঁদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া।