হাতকড়া এড়াতে হাসপাতালে ভুল তথ্য ক্ষতবিক্ষত কাশ্মীরিদের!
বিক্ষোভের সময় ঝান্ডা ওড়াতে গিয়ে বাড়ির উপর থেকে পড়ে গিয়েছিল কাশ্মীরের বারামুলার ছেলেটি। অথচ হাসপাতালের নথিতে তার পরিবারের দাবি, গাছ থেকে পড়ে গিয়েই নাকি গুরুতর চোট পেয়েছে সে!
গায়ে ছররার ক্ষত। অথচ হাসপাতালে এসে আহত যুবক জানাচ্ছেন, এ সবই নাকি দুর্ঘটনার ফল!
পুলিশের চোখে ধুলো দিতে এখন হাসপাতালে গিয়ে এমনই ‘কাহিনি’ বলছেন কাশ্মীরিদের একাংশ।
নাম না লেখার শর্তে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের এক সার্জন জানাচ্ছেন, বিক্ষোভকারীদের খুঁজে বার করতে হাসপাতালে ভর্তি আহতদের কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করছে পুলিশ। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালের নথিতে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য দিচ্ছে আহতের পরিবার।
তবে এভাবে হাতকড়া এড়াতে পারছেন না অনেকেই। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে আঘাতের ধরনের সঙ্গে হাসপাতালের নথিতে লেখা ‘কারণ’ মিলছে না। ওই সার্জন মঙ্গলবার ফোনে ‘এবেলা’কে বলেছেন, ‘‘মাথায় চোট নিয়ে এসে রোগী দাবি করছেন, মোটরবাইকে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথচ তাতে শুধু মাথায় আঘাত পাওয়া অসম্ভব। ফলে পুলিশের সন্দেহ বাড়ছে। এছা়ড়া, পুলিশ এবং সিআরপিএফ বিক্ষোভের সময় ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখে। ফলে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে।’’
হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর কাশ্মীরে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে টানা দেড়মাস। বিক্ষোভ হঠাতে সেনার ছররা এবং গুলিতে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ, নিহত ৬৫। স্থানীয়দের দাবি, গত দেড় মাসে প্রায় এক হাজার কাশ্মীরিকে জেলে পুরেছে পুলিশ। কখনও বাড়ি থেকে, কখনও হাসপাতালের শয্যা থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন যুবক অথবা বিক্ষোভকারীকে। হাসপাতালেও রয়েছে পুলিশি নজরদারি। ফলে সাধারণ মানুষ এতটাই ভীত যে, হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না!
বিক্ষোভ হঠাতে নিরাপত্তাবাহিনীর ছররায় এখনও পর্যন্ত আহত প্রায় এক হাজার। অন্তত ৪৫০ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত। হাসপাতালে স্থানাভাবের কারণে এঁদের অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কয়েক সপ্তাহ পরে তাঁদের ফের হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের ভয়ে তাঁদের অনেকেই আর হাসপাতালে যাননি। অথচ সময়মতো চিকিৎসা না করালে তাঁদের জীবন সংশয় হতে পারে বলে মনে করছেন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন কাশ্মীরে’র প্রেসিডেন্ট নিশার উল হাসান। তাঁর কথায়, ‘‘চোখ প্রতিস্থাপনের বন্দোবস্ত কাশ্মীরে নেই। তাই যাঁদের চোখে আঘাত রয়েছে, তাঁরা চিকিৎসা না করালে চোখ হারাতে হতে পারে।’’
শরীরে এখনও ছররা রয়ে গিয়েছে যাঁদের, তাঁদের জন্য আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক হাসান। তাঁর কথায়, ‘‘এমআরআই স্ক্যানার এবং মেটাল ডিটেক্টরের মতো যন্ত্র চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। তাতে শরীরের ভিতরে থাকা ছররার অংশ এদিকওদিক সরে যেতে পারে। তেমন ক্ষেত্রে ছররা হৃদপিণ্ড বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। সমস্যা হল, বিমানবন্দর থেকে শপিং মল— সর্বত্রই মেটাল ডিটেক্টরের ছড়াছড়ি।’’