‘হয় সাথে থাক, নয়তো ক্রসফায়ারের জন্য তৈরি থাক’
‘হয় আমার সাথে থাক, নয়তো ক্রসফায়ারের জন্য তৈরি থাক।’ লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার সদ্যবিদায়ী সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম মোস্তফার এমন হুমকির প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
আদিতমারী প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন উপজেলার মহিষখোচার মো. আবদুল হক (৪৫)। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন একই এলাকার আশরাফুজ্জামান রাজু।
আজ দুপুরে ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য থেকে জানা গেছে, এএসআই গোলাম মোস্তফা আদিতমারী থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু যুবকের মাধ্যমে নিজ অর্থায়নে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিচালনায় বিভিন্ন অভিযানে তাঁর কিছু মাদক জব্দ করা হয়। গোলাম মোস্তফা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহিষাশহর এলাকার শ্যামল চন্দ্রকে সম্প্রতি বাড়ি থেকে ধরে কয়েক বোতল ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন। এ ঘটনায় শ্যামল চন্দ্র ও তাঁর এলাকার লোকজন সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে সরকারের বিভিন্ন মহলে গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে শ্যামল চন্দ্র অভিযোগ করায় তাঁকে (শ্যামল) শায়েস্তা করতে আবদুল হকসহ স্থানীয় আরও কয়েক যুবককে তিনি নানাভাবে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গোলাম মোস্তফা। এ সময় তিনি আবদুল হকসহ অন্য যুবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘হয় আমার সাথে থাক, নয়তো ক্রসফায়ারের জন্য তৈরি থাক। দেখেছিস, শ্যামলকে কীভাবে চালান দিয়েছি? তোরা মন্ত্রী-এমপিদের দিয়েও আমার কিছুই করতে পারবি না।’
আবদুল হক ও আশরাফুজ্জামান রাজু নিজেদের পুলিশ ও ডিবির সোর্স দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সমাজের জন্য যেটা ভালো হবে, অপরাধের বিপক্ষে যাবে, এমন কাজ করতে রাজি আছি ও ছিলাম। কিন্তু পুলিশের হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে অহেতুক শায়েস্তা করতে পারি না। আমরা রাজি না হওয়ায় এখন ক্রসফায়ারের হুমকিতে আছি। কোথায় যাব, নিরুপায় হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনাটির প্রতিকার চাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল হকরা মাদক ব্যবসায়ীদের হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।’ তিনি জেলা ডিবি পুলিশে তাঁর বদলি হওয়ার কথা দাবি করে বলেন, ‘১৬ জুলাই নতুন কর্মস্থল লালমনিরহাটে যোগদান করব।’
এদিকে জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়ছার আলী খান আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গোলাম মোস্তফা নামের কেউ ডিবি পুলিশে যোগদান করেননি। কাজেই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেশ্বর রায় বলেন, ‘আমি গত ২৩ জুন ওসি হিসেবে এ থানায় যোগদান করি। যোগদানের পর বিভিন্নভাবে এএসআই গোলাম মোস্তফার বিষয়ে ভালো-মন্দ অনেক কিছুই শুনেছি।’ তবে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারাই আমার চেয়ে তাঁর বিষয়ে ভালো জেনে থাকবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী থানার বিভিন্ন মহল থেকে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এএসআই গোলাম মোস্তফাকে লালমনিরহাট কোর্টে বদলি করা হয়। তিনি যোগদান করেই দুই দফায় ছুটি নেন। তিনি ডিবিতে বদলি হয়েছেন দাবি করে আবদুল হকসহ অন্যদের দেখে নেওয়ার, ক্রসফায়ারে দেওয়ার কথা বলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজারের একটি দোকানে মাদক সেবন করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন তৎকালীন কালীগঞ্জ থানার ওই এএসআই গোলাম মোস্তফাকে মারধর করেছিলেন। ঘটনার পরদিন তাঁকে কালীগঞ্জ থানা থেকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাঁকে আদিতমারী থানায় বদলি করা হয়।
এএসআই গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই প্রথম আলোর বিশাল বাংলায় ‘মাদক সেবন করায় এএসআইকে মারধর’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
Like this:
Like Loading...