আলসারেটিভ কোলাইটিস
এই অসুখটি আমাদের দেশে তেমন পরিচিত নয়। ইউরোপ এবং আমেরিকাতেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী। কিন্তু বর্তমানে তাদের অন্ধ অনুকরণের জন্য আমাদের দেশেও আসলারেটিভ কোলাইটিস দেখা যাচ্ছে। আলসারেটিভ কোলাইটিসের সাথে ক্রনস ডিজিজের বেশ মিল রয়েছে। অনেক সময় এই দুই অসুখের মধ্যে পার্থক্যই করা যায় না। এই দুই অসুখকে একসাথে ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ বলা হয়।
রোগের কারণ:
সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের আলসারেটিভ কোলাইটিস হয়। বংশগতির সাথে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে। নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে এ রোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপায়ীদের আলসারেটিভ কোলাইটিস বেশী হয়। কোলনের ভেতরের অর্থাত্ মিউকোসা দুর্বল হলে এ রোগ হতে পারে।
উপসর্গসমূহ:
১. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।
২. মলদ্বার দিয়ে অনেক সময় মিউকাস বের হয়।
৩. পায়খানার সাথে রক্ত যায়।
৪. মলদ্বারে ব্যথা হতে পারে।
৫. তল পেট মোচড় দেয় এবং অনেক সময় তীব্র পায়খানার বেগ হয়।
৬. পায়খানার সাথে রক্ত যাবার ফলে রোগীর রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
৭. অরুচি ও অস্বিস্থি হতে পারে।
৮. ওজন কমে যেতে পারে।
৯. রোগীর জ্বর থাকে এবং হূদপিন্ডের গতি বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসা না করালে নিম্নলিখিত জটিলতা দেখা দিতে পারে-
১. কোলনে তীব্র প্রদাহ হতে পারে ও কোলনে ক্যান্সার হতে পারে।
২. কোমর, মেরুদন্ড ও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে।
৩. ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
৪. চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন লাল দাগ অথবা আলসার হতে পারে।
৫. মুখ এবং হাত পায়ে পানি আসতে পারে।
৬. চোখে প্রদাহ হয় এবং চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৭. জন্ডিস হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
পরীক্ষা নিরীক্ষা:
রক্ত পরীক্ষা করলে হিমোগ্লোবিন কমে যায় এবং ইএসআর বেড়ে যায়। এছাড়া সিগময়ডোস্কোপি, কোলোনোস্কপি, বেরিয়াম ইনেমা, আলট্রাসনোগ্রাফি, এম.আর.আই ও সি.আর.পি করা হয়। এসবের মধ্যে কিছু পরীক্ষা ডায়াগনসিসে সাহায্য করে আর কিছু পরীক্ষা চিকিত্সার অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা:
সাধারণত স্টেরয়েড ও সালফাস্যালাজিন দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। বর্তমানে মেসালাজিন এবং অসালাজিন ব্যবহূত হচ্ছে। হাইড্রোকর্টিসন, অ্যাজাথায়োপ্রিন এবং সাইক্লোস্পোরিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে শরীর ও মুখ ফুলে যেতে পারে, মাথার চুল পড়ে যেতে পারে, অনিদ্রা, অরুচি হাতে পায়ে জ্বালা পোড়া এবং বমি বমি ভাবসহ নানাবিধ শারিরীক অসুবিধা দেখা দেয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন লাগতে পারে। তবে আশার কথা হল সবার ক্ষেত্রে অপারেশন লাগে না। যাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিত্সার পরেও কাজ হয়না, যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং যখন স্টেরয়েড এবং অন্যান্য ওষুধ আর কাজ করেনা তখন অপারেশন করা হয়। কেউ যদি খুব দুশ্চিন্ত করে এবং দুধ জাতীয় খাবার বেশী খায় তবে আলসারেটিভ কোলাইটিসের উপসর্গ বারবার হতে থাকে। দক্ষ চিকিত্সকের কাছে যাওয়া উচিত। ঠিকমতো চিকিত্সা করলে অনেক আরামে থাকা সম্ভব।
Like this:
Like Loading...