ইচ্ছাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে বিমান বা হুইলচেয়ার
ইচ্ছাশক্তি দিয়ে বিমান চালানো বা হুইলচেয়ার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি শুনতে অবাক হলেও ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়নের পথে। খুব শিগগিরই মানবজাতি তাদের মস্তিষ্ক তরঙ্গের সংযোগের মাধ্যমে ড্রোন চালানো, হুইলচেয়ার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের কাজ করতে পারবেন। আর অসম্ভব এই কাজটি করছেন ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী। যারা যন্ত্রের সঙ্গে মস্তিষ্ক তরঙ্গের সংযোগ করছে।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের গবেষকরা এমন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে এবং পাইলট শুধু তার মন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সমন্বয়ক রিকার্ডো মেন্ডেস বলেন, প্রথম আমরা লিসবন শহরের বাইরে এক বিমানক্ষেত্র থেকে একটি ড্রোন উড়াল প্রদর্শন করছি, যা পাইলট জয়স্টিক ও বোতামের বদলে শুধু তার চিন্তাশক্তির সাহায্যে ড্রোনের গতিপথ স্থির করে নিয়ন্ত্রণ করবেন। বেশিরভাগ ড্রোনের মতো এ ক্ষেত্রেও মাটি থেকে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রচলিত প্রক্রিয়া থেকে ‘ব্রেন ফ্লাইট’-এর হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছি। সেই মুহূর্ত থেকে পাইলটের মস্তিষ্ক তরঙ্গ ড্রোনটিকে ওড়াবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেন্ডেস আরো বলেন, অ্যারোনটিক্স ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা ভাবছি। যেমন হুইলচেয়ারে এই প্রযুক্তি বসালে ইচ্ছাশক্তি দিয়েই সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অথবা বাসার সব অ্যাপ্লায়েন্সও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এমনকি মস্তিষ্কের তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে আলোর বাতি জ্বালানো বা বন্ধ করা, ইমেইল লেখা, কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালনা করার মতো অনেক কাজ করা হয়তো একদিন সম্ভব হবে। ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেসের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এমন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের আরেক গবেষক রুই কস্টা বলেন, ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেসের ওপর ভিত্তি করে আমরা এমন এক টুপি ব্যবহার করি, যা এই টুপির ভেতরে থাকা কিছু ইলেকট্রোড মাথার খুলির সংস্পর্শে এসে মস্তিষ্কের মধ্যে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পড়ে নিতে পারে। আর বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই সঙ্কেত কম্পিউটারে পাঠানো হয়। তার ভিত্তিতে কার্সরের নড়াচড়া পর্দায় দেখা যায়। পাইলট পর্দার দিকে তাকালে তার মস্তিষ্ক এমন বৈদ্যুতিক প্যাটার্ন শিখে ফেলে, যেগুলোর মাধ্যমে কোনো বস্তুর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলেও জানান এই গবেষক।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, আরো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া গাড়ি চালানোর মতোই স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠতে পারে। আর সেই লক্ষ্যে পূর্ণ মাপের এক বিমান সিমুলেটরেও এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস ভবিষ্যতে কন্ট্রোল প্যানেল অনেক সহজ করে তুলবে। তাছাড়া পাইলট প্রশিক্ষণের সময়ও কমে যেতে পারে। এমনকি একদিন হয়তো পঙ্গু মানুষও বিমান চালাতে পারবেন।
Like this:
Like Loading...