খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগ চরমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ভূঞাপুরে কেউ পায়নি ত্রাণ সহায়তা

নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। তবে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন ও বন্যা দুর্গতদের মাঝে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে সামান্য। কোন কোন অঞ্চলে এখনো পৌঁছেনি ত্রাণ। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। ব্যুরো অফিস, প্রতিনিধি, সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

জামালপুর:যমুনার পানি হ্রাস পেয়ে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। জামালপুর-তারাকান্দি বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত রেল যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, বকসিগঞ্জ উপজেলার পানি অপরিবর্তিত থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। বকশীগঞ্জে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। নৌকা দেখলেই ত্রাণ পাওয়ার আশায় ছুটে আসছেন বানভাসী মানুষ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান সিদ্দিক জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে না পারবে ততক্ষণ সরকার তাদের পাশে থাকবে।

বরিশাল:কীর্তনখোলার নদীর ভাঙনে চরবাড়িয়া ও চরআবদানী গ্রামের ১০/১২ টি বসত ঘর ফসলি জমি, বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নাজিরবাড়ি স্কুল, পাকারাস্তাসহ বহু স্থাপনা। এদিকে গতকাল মেঘনা, কালাবদর, তুেলিয়া, কীর্তনখোলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে বরিশাল নগরীসহ আশপাশ ও উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা: ‘জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃঞ্চ সরকার জানান, পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে সিংড়িয়া ও সাঘাটা এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলছে।’ গত দুইদিনে যমুনা নদীর ভাঙনে ফুলছড়ি উপজেলার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি সরে গেলেও আবাদি জমি এখনো পানির নিচে।

বগুড়া: জেলার বন্যা কবলিত তিন উপজেলায় ৩৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল এ পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল। উপজেলাগুলো হলো- সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ধুনটের কামরুল হাসান ও সোনাতলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এ কথা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পনি ও খাবারের অপেক্ষায় দিন কাটছে। সারিয়াকান্দিতে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে সাড়ে ১৯ হাজার কৃষি পরিবারের ৩৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেরন।

শেরপুর: বন্যার পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হওয়ায় নকলা উপজেলার নতুন নতুন করে এলাকা বন্যা কবলিত হচ্ছে। শেরপুর সদরের পিআইও মো. ছানুয়ার হোসেন জানান, বন্যায় ২ হাজার ৯০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেরপুর জামালপুর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও গতকাল ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ:‘জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল জানান, গতকাল ৬ সেন্টিমিটার কমে ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ও ৬ সেন্টিমিটার কমে মাওয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলপদ্মার পনি কমতে শুরু করেছে।’ তবে পানিবন্দী মানুষ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি ও শ্রীনগর উপজেলার প্লাবিত এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার বিষুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে রয়েছেন।

কালিহাতি (টাঙ্গাইল): বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানায়, ৪১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। ৮৬টি পুকুর প্লাবিত হওয়ায় মাছ বেরিয়ে গেছে। মত্স চাষীদের ক্ষতিগ্রস্থের পরিমাণ ক্রমসেই বাড়ছে।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল):দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভূঞাপুরে বন্যাকবলিত মানুষ কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। দুর্দশাগ্রস্তদের খোঁজ নেয়নি কোন বেসরকারি সংস্থাও। ফলে বানভাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। লোকজন না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বন্যায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কোন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। বন্যায় ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিজ দায়িত্বে স্কুলঘর, মাদরাসা ও উচুবাঁধে আশ্রয়সহ বঙ্গবন্ধুসেতুপূর্ব-তারাকান্দি সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি গ্রামে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্রশাসন থেকে বারবার বলা হচ্ছে বন্যায় তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বন্যা কবলিত প্রায় ১২ হাজার পরিবারের কেউ কোন প্রকার ত্রান সহায়তা পায়নি । উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল জানান, দুই ধাপে ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) থেকে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।”

বেড়া (পাবনা): উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

ভাঙ্গুড়া (পাবনা): ত্রাণ অভাবে বানভাসীদের কষ্ট বাড়ছে। এখনো বহু পরিবার পানিবন্দী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিঃদায়িত্ব) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত তারা কোনো ত্রাণ বরাদ্দ পাননি।

ঘিওর (মানিকগঞ্জ): জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসী শিখা জানান, বন্যার কারেণ মানিকগঞ্জের ছয়টি উপজেলার ৩৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিয়া জানান, বন্যার পানিতে ১৬ হাজার ২৩৫ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। মত্স্য কর্মকর্তা নূরতাজুল হক জানান, বন্যা কবলিত ছয়টি উপজেলার ২ হাজার ৬৩৬টি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): উপজেলায় বন্যার সামান্য পানি সামান্য কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। গতকাল প্রায় ১১ সেন্টিমিটার পানি কমে এখনো বিপদ সীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়। এসময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচীব খালিদ মাহমুদ, জেলা প্রশাসক জিনাত আরা, উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ):বন্যায় ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দী মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো সহায়তা না পাওয়ায় তাদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। এক মুঠো চালের জন্য হাহাকার করছে পানিবন্দী মানুষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল হাসান জানান, ১৫০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এখন চাউলের পাশাপাশী শ্যালাইনের ব্যবস্থা করা হবে।

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): উপজেলার নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নে মেঘনা তীরবর্তী চরলাপাং গ্রামে মঙ্গরবার রাতে নদী ভাঙনে ১০টি বাড়িঘর, ১৫টি দোকন বিলিন হয়ে গেছে।