মাঝপথে আটকাল ট্রেন, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ
জামালপুরের মেলান্দহে বন্যার পানি রেললাইনের ওপরও উঠে গেছে। গতকাল শুক্রবার উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় পানির মধ্যে আটকা পড়েছিল একটি কমিউটার ট্রেন। পরে যাত্রীদের পানির মধ্যেই নামিয়ে দিয়ে ট্রেনটি ওই এলাকা পার করা হয়। এতে যাত্রীরা, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা চরম বিপাকে পড়ে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের গোমর দুরমুঠ এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটি দুরমুঠ এলাকায় বন্যার পানিতে আটকা পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে ট্রেনটি আটকে ছিল। পরে সব যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে ট্রেনটি ধীরে ধীরে ওই অংশ পার হয়। যাত্রীরা তাদের মালপত্র কাঁধে নিয়ে তলিয়ে যাওয়া ওই পথ পাড়ি দেয়। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে জামালপুর-ইসলামপুর মহাসড়কে পৌঁছায়। পরে সেখান থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে যায়।
এদিকে নয় দিন ধরে দুর্গত এলাকার কয়েক লাখ মানুষ রাস্তা, উঁচু স্থান ও বিভিন্ন বাজারে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও তারা পায়নি। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পানি বিশুদ্ধকরণ বড়িও নেই। এদিকে পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গত মানুষের অভিযোগ, এত দিনেও সরকারি কোনো চিকিৎসক দলের দেখা তারা পায়নি।
মেলান্দহ উপজেলার হামলাপাড়া, দুরমুঠ, নয়াপাড়া, খুতিয়াকান্দা, শিতানীপাড়া কুলিয়া, সাদিপাটি এবং ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলীর দক্ষিণ বামনা, ডেবরাইপ্যাচ, আমতলী, নতুন পাড়া, উলিয়া, পাথর্শী, হাড়গিলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল সরেজমিনে বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মেলান্দহ আলেয়া আজম কলেজের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজার হাজার ঘরবাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে। এ পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ চাপকল তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষ হাহাকার করছে। পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি জরুরি দরকার। দুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু দুর্গত এলাকায় কোনো চিকিৎসক দল দেখিনি।’
এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মো. মোশায়ের উল ইসলাম বলেন, বন্যাকবলিত প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল দল এবং প্রতিটি উপজেলায় আরও একটি করে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল রয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব দল যাতে চিকিৎসার জন্য দুর্গত এলাকায় যায়, সে জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে আজ (গতকাল) আমি সভা করেছি। তাঁরা সব দুর্গত এলাকায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় ইসলামপুর উপজেলার ইসলামপুর-গুঠাইল, ইসলামপুর-নোয়ারপাড়া, পাথর্শী-বেলগাছা, মলমগঞ্জ-ইসলামপুর এবং মেলান্দহ উপজেলার মেলান্দহ-মাহমুদপুর, মাহমুদপুর-নোয়ারপাড়া, টনকি-পচাবহলা, হামলাপাড়া-টনকি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আলীম বলেন, বন্যার কারণে এ পর্যন্ত ২৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Like this:
Like Loading...