শুরু হলো ডেনিম উৎসব
রাজধানী ঢাকায় শুরু হলো ষষ্ঠ ডেনিম উৎসব। র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে। ডেনিমঅ্যান্ডজিনস বাংলাদেশ এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। চলবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত।
গতকাল সকালে র্যাডিসন হোটেলের হলরুমে ঢুকতেই চারদিকে শুধু জিনস আর জিনস পোশাক। বাহারি জিনস প্যান্ট; শার্ট, স্কার্ট—কী নেই এখানে। সহজ ভাষায় বললে ডেনিম হলো জিনস কাপড়ের তৈরি পোশাক। দেশি-বিদেশি প্রতিটি স্টলেই ডেনিম পণ্যের সমাহার।
এবারের প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে চীনের গুয়াংজু জি-টারা টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ১৮ কোটি গজ। এই প্রতিষ্ঠান চার মাস ধরে বাংলাদেশে জিনস কাপড় রপ্তানি করছে। উত্তরায় এ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ কার্যালয়।
গুয়াংজু জি-টারা টেক্সটাইলের মহাব্যবস্থাপক উইলিয়াম ওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে ডেনিম পণ্যের প্রসার ঘটছে। অনেক কারখানা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। এ ক্রমবর্ধমান বাজারটি ধরতে চায় গুয়াংজু জি-টারা টেক্সটাইল। প্রদর্শনীতে ক্রেতাদের সামনে এ কোম্পানির পণ্য তুলে ধরা হচ্ছে।
একইভাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেডও এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মাসে ১৫ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক দাউদ বিন জাফর প্রথম আলোকে বলেন, স্কয়ার ডেনিম স্থানীয় বাজার ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করছে।
এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্যাতনামা ২৮টি ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড, হা-মীম ডেনিম লিমিটেড, মালওয়া ইন্ডাস্ট্রি, আর্টিস্টিক ডেনিম মিলস লিমিটেড, নন্দন ডেনিম লিমিটেড, ক্যানোরিয়া আফ্রিকা টেক্সটাইল, ভিচুয়ানা, ভাস্কর ডেনিম। ‘ভিন্টেজ রিকল’ থিম নিয়ে এবারের আসরে ডেনিম উৎসব হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেনিম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে চীনের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ডেনিম পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারে ডেনিমের চাহিদা ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এর ৭০ ভাগের জোগান দেবে এশীয় দেশগুলো। তাই বিশ্বের অন্যতম ডেনিম উৎপাদক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে মনে করেন আয়োজকেরা।
এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম অর্চটাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের আতিক-ই-রাব্বানী প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডেনিমঅ্যান্ডজিনস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সন্দ্বীপ আগারওয়াল।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডেভরিম অর্চটাক বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। ডেনিম পণ্য নিয়ে এই আয়োজন এখানকার পোশাক উৎপাদক ও বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করবে।
এ শিল্পের সম্প্রসারণে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে রপ্তানি ৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে হলে এ পোশাকশিল্পে সুবিধা দিতে হবে। তাই এ শিল্পে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। এ দেশে এখন এনভয়ের মতো পরিবেশবান্ধব বিশ্বমানের কারখানাও নির্মাণ করা হয়।
ডেনিমঅ্যান্ডজিনস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সন্দ্বীপ আগারওয়াল বলেন, সারা দুনিয়ায় ডেনিমের বাজার সুবিশাল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও হয়ে গেছে সে বাজারের বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের আগমনী পদধ্বনি আরও শোনা যাচ্ছে ভারত, চীন, লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী বাজারে।
Like this:
Like Loading...