আজকের বাংলা তারিখ
  • আজ শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৫:৪৯

২০১৭ সালের আলোচিত প্রযুক্তি

প্রযুক্তির উন্নয়ন ক্রমেই বাড়ছে। এই উন্নয়নের ধারা মূলত চলছে সময়োপযোগী করে। ২০১৭ সালে প্রযুক্তির উন্নয়নে ঘটেছে বেশ কিছু অসাধারণ আবিষ্কার। এসব আবিষ্কার গোটা বিশ্বের অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতিতে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমনকি সংস্কৃতিতেও প্রভাব ফেলেছে।

পক্ষাঘাত নিরাময় প্রযুক্তি
যেকোনো মানুষই প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত শব্দটির কথা শুনলেই প্রায় ভয়ে আঁতকে ওঠেন। মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশই শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দুর্ঘটনা বা রোগাক্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক স্নায়ুর সাহায্যে মেরুদণ্ডের মাধ্যমে সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয়। ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঙ্গটিও বিকল হয়ে পড়ে, যাকে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত বলা হয়। সাময়িকভাবে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলে তা আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তবে সেটা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। তবে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার কোনো উপায় পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরে ছিল না।
মস্তিষ্কের কার্যকলাপ কম্পিউটারের মাধ্যমে সংকেতে রূপান্তর করার প্রযুক্তি আগেই উদ্ভাবিত হয়েছে। আর সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশার বাণী নিয়ে এসেছেন ফ্রান্সের একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী ও গবেষক। ফ্রেঞ্চ দলটি এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের সংকেতযন্ত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করে তা আবার বিকল অঙ্গে পাঠানো যাবে। এ পদ্ধতিতে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত মস্তিষ্কের অংশ উদ্দীপিত করে তুলে সেই সংকেত একটি যন্ত্রে গ্রহণ করা যাবে। একইভাবে আবার সেই সংকেত বিকল অঙ্গের স্নায়ুতে যুক্ত যন্ত্রেও পাঠানো যাবে। তারহীন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীকে আবার সচল করে তোলা সম্ভব। তবে আরও ১০ থেকে ১৫ বছর পর এ প্রযুক্তি সহজলভ্য হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবক দলটি।

সোলার সেল প্রযুক্তি
সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার পদ্ধতির সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত। সূর্যের রশ্মি থেকে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। তবে এই অ্যানালগ পদ্ধতিতে সৌরশক্তি সঞ্চয়ে একদিকে যেমন প্রয়োজন অনেক জায়গার, তেমনি অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতাও অনেকাংশে কম। তা ছাড়া এ পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুলও বটে। সেই সঙ্গে প্রতিকূল আবহাওয়ায় সৌরশক্তি সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ধরনের নানা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষক ২০১৭ সালে আবিষ্কার করেছেন নতুন ধরনের সৌরশক্তি সংরক্ষণের ‘সোলার সেল’। নতুন এ সোলার সেল আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে সৌরশক্তি সংরক্ষণ করতে সক্ষম, যাতে ব্যবহার করা হয়েছে উদ্ভাবনী প্রকৌশল ও উন্নত উপকরণ বিজ্ঞান। নতুন এ পদ্ধতিতে সূর্যের আলোক রশ্মিকে প্রথমে তাপে রূপান্তর করা হয়। এরপর সেটিকে আবার রশ্মিতে রূপান্তর করে বহুগুণ বেশি শক্তি উৎপন্ন করা হয়। তবে আগের সোলার প্যানেলের চেয়ে আকৃতিতে ছোট হয়েও ৩০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম এই হট সোলার সেল। যদিও এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে আগামী ১৫ বছরের মধ্যেই এর প্রচলন শুরু হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ট্রাক
২০১৭ সালে যে প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, সেটি হলো চালকহীন গাড়ির প্রযুক্তি। চলতি বছর এই প্রযুক্তির উন্নতি সাধন হয়েছে বেশ। চালকহীন গাড়ি ছাড়াও ২০১৭ সালে এই প্রযুক্তি পৌঁছেছে ট্রাক বা ভারী মালামাল বহনকারী বাহনগুলোর দোরগোড়ায়। তবে ট্রাকে চালকহীন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ ছিল। কেননা ট্রাকের আয়তনের পাশাপাশি এর পণ্যবোঝাইয়ের পরিমাণ এবং রাস্তাভেদে গতির নিয়ন্ত্রণ সাধারণ গাড়ির চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। এ ছাড়া একজন দক্ষ চালক হতে গেলে প্রয়োজন বছরের পর বছরের অভিজ্ঞতা। যা একটি কম্পিউটারকে সহজে বোঝানোটা বেশ কঠিন। তবে দীর্ঘদিনের গবেষণার পর এ বছর চালকহীন ট্রাক প্রযুক্তিতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চালকহীন ট্রাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অট্টো চলতি বছর সফলতার সঙ্গে তাদের চালকহীন ট্রাকের পরীক্ষা করে দেখেছে। আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চালকহীন ট্রাক তৈরিতে পরীক্ষামূলক গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চীনেও ইতিমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষামূলক ট্রাক প্রায়ই দেখা যায়। তবে কর্মসংস্থান বিশ্লেষকেরা ভাবছেন, ট্রাকচালকদের ভবিষ্যতের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৭ লাখ পেশাদার ট্রাকচালকের কর্মসংস্থান রয়েছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বাস্তবিক প্রযুক্তি
বিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র যাঁরা দেখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এমন কম্পিউটারের কথা শুনেছেন, যা এখনকার সুপার কম্পিউটারের চেয়েও অনেক গুণ বেশি দ্রুতগতির এবং আকারে ছোট। অত্যন্ত দ্রুতগতির এই ধরনের কম্পিউটার কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত। অনেক বছর ধরে চলা দীর্ঘ গবেষণার যেসব ফলাফল এ বছর বাস্তবে রূপ নিয়েছে, তার মধ্যে এ ধরনের কম্পিউটার অন্যতম। মূলত কম্পিউটারের আকার ছোট রেখেই এর কর্মদক্ষতা আরও বাড়াতে এ ধরনের কম্পিউটারের উদ্ভাবন করা হচ্ছে। সাধারণ কম্পিউটারের প্রসেসর কোটি কোটি ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। তবে আকার ছোট করতে গিয়ে সেই প্রসেসরের আকারও ছোট করতে হচ্ছে এবং ট্রানজিস্টরের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে একসময় এই ট্রানজিস্টরের আকার পরমাণুর সমান আকৃতির হয়ে যাবে। এদিকে ট্রানজিস্টর কাজ করে বাইনারি পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ০ ও ১ দ্বারা কম্পিউটারে যেকোনো কাজের সংকেত পাঠানো হয়। আর প্রতিটি শূন্য বা এক-কে একটি বিট হিসেবে গণ্য করা হয়। এখন ট্রানজিস্টরের আকৃতি যদি পরমাণুর সমান হয়ে যায়, তবে সেখানে এই বিট সংকেত পাঠানোটা বেশ দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারে বিটের বদলে ট্রানজিস্টরে ব্যবহার করা হবে কোয়ান্টাম বিট বা কিউ বিট। মূলত, পদার্থবিজ্ঞানের কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যবহার করেই এই কোয়ান্টাম বিটের উদ্ভাবন করা হয়েছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম বিট একই সময়ে একাধিক বিট সংরক্ষণ করতে সক্ষম। এ বছর আইবিএম, গুগল, মাইক্রোসফট ও ইন্টেলের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল কাঠামো উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গতা পাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

মুখাবয়বের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন ও অপরাধী শনাক্তকরণ
অর্থ লেনদেনে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এখন আর কেউ নগদ অর্থ নিয়ে ঘোরাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। অর্থ লেনদেনে প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে স্মার্টফোনের মাধ্যমেও অর্থ আদান-প্রদান করা যায়। তবে এ প্রযুক্তিতেও চলতি বছরে এসেছে নতুনত্ব। অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত করে তুলতে চালু হয়েছে মুখাবয়বের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা। সে জন্য একটি স্মার্টফোনই যথেষ্ট। গত নভেম্বরে বাজারে আসা অ্যাপলের আইফোন টেনেই সে প্রযুক্তি রয়েছে। তবে স্মার্টফোন ছাড়া মুখাবয়ব শনাক্ত করার যন্ত্র এখন শুধু চীনেই প্রচলিত হয়েছে। দেশটির বড় বিপণিবিতানগুলোয় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ করার সুবিধা আছে।
এ ছাড়া চীনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে। গত কয়েক বছরে কম্পিউটার মানুষের মুখাবয়ব শনাক্ত করার প্রযুক্তিতে বেশ অগ্রগতি করেছে। সে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই চীনের রাস্তায় বসানো হচ্ছে মুখাবয়ব শনাক্ত করার ক্যামেরা। শুধু তা-ই নয়, এই ক্যামেরাগুলো গাড়ির তথ্যও বের করতে সক্ষম।

MY SOFT IT Wordpress Plugin Development

Covid 19 latest update

# Cases Deaths Recovered
World 0 0 0
Bangladesh 0 0 0
Data Source: worldometers.info

Related News

বেঁচে গেল মানব জাতি, পৃথিবীর পাশ ঘেঁষে বেরল বিরাট গ্রহাণু

নিউইয়র্ক: কান ঘেঁষে না হলেও পাশ ঘেঁষে তো বটেই। কেটে গেল ফাঁড়া। পৃথিবীর পাশ কেটে বেরিয়ে গেল প্রায় ২ কিলোমিটার ...

বিস্তারিত
করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত চীনে স্মার্ট হেলমেট

করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত চীনে স্মার্ট হেলমেট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হওয়া নতুন রোগী শনাক্তে অভিনব ব্যবস্থা নিয়েছে চীন সরকার। সম্প্রতি দেশটির কিছু ...

বিস্তারিত
করোনা নিয়ে প্রতারণা বাড়ছে, ইন্টারপোলের হুঁশিয়ারি

করোনা নিয়ে প্রতারণা বাড়ছে, ইন্টারপোলের হুঁশিয়ারি

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত আর্থিক প্রতারণা বাড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ ...

বিস্তারিত
করোনা পরীক্ষায় রোবট চিকিৎসক

করোনা পরীক্ষায় রোবট চিকিৎসক

চীনের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা একটি রোবট তৈরি করেছেন, যা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে জীবন ...

বিস্তারিত
%d bloggers like this: