আজ ধরছি কাল ছাড়ছি
ওজন নিয়ে যখন হাঁপিয়ে উঠেছেন, কমাতে চেয়েছেন তীব্রভাবে। ডায়েট শুরু করলেন যখন, তখন সচেতনতা ছিল সবকিছুতে। প্রচুর শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে শর্করা, লাল মাংস (রেড মিট) আর মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিয়েছেন। পরিমাণমতো আমিষ নিয়ে খেয়েছেন, সব সময়ই ক্যালরি হিসাব করে খাবার গ্রহণ করেছেন। এরপর ধীরে ধীরে কমেছে বাড়তি ওজন। কিন্তু তারপর? কয়েক মাস বা বছরের টানা এই রুটিন ভেঙে চলে গেছেন আগের জীবনযাপনে। অনেক দিন পর খাসির মাংস দেখে লোভ সামলানো যাচ্ছে না! খেলেনও কয়েক টুকরো। কিংবা এক বেলা হাত দিলেন বিরিয়ানির থালায়। এতে আবার ওজন বাড়তে শুরু করল। শুধু কি ওজনটাই বাড়ছে? আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘কয়েক দিন ডায়েট করে তারপর ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটি খুব খারাপ। এতে শরীরে নানা ধরনের নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। একটা লম্বা সময় একধরনের খাবারের অভ্যস্ততার পর হুট করে ওজন কমে গেছে। এটা ভেবে খুব বেশি খেয়ে ফেললে যেমন ওজন বেড়ে যাবে, তেমনি শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দিলে কিন্তু একসময় গিয়ে আর আগ্রহ পাবেন না। তখন কিছুক্ষণ হাঁটতেই ক্লান্তি লাগবে। শারীরিক পরিশ্রমকে একধরনের অতিরিক্ত কষ্ট মনে হতে থাকবে।’
একবার ওজন কমার পর আবার বেড়ে যাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে আনাও কঠিন হতে পারে। ডায়েট ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরের চামড়া ঝুলে যাওয়া, চুল পড়া, চেহারায় বার্ধক্যের ছাপসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। চোখের নিচে গর্ত হয়ে যায়, কালি পড়ে। খাদ্যাভ্যাসের এই অসচেতনতা শরীরে নানাভাবে ফুটে ওঠে। শুধু শারীরিক সমস্যাই নয়, আশপাশের লোকের নানা প্রশ্ন ও নিজের পরিবর্তনে একসময় মানুষ কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলতে পারেন। বেড়ে যাওয়া ওজন কিন্তু অনেক সময় বিষণ্নতায় ফেলে দিতে পারে। তাই কোনোভাবেই কিছুদিন ডায়েট করে ওজন কমানোর পর আবার আগের জীবনযাপনে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না।
সে ক্ষেত্রে বেড়ে যাওয়া ওজন কমে গেলে এরপর আবার পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে এরপর কী করতে হবে, সেটা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া ওজন কমে গেছে ভেবে নিয়মিত যেসব ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা বা ডিটক্স খাবারের অভ্যাস তৈরি হয়েছে, সেটিও বন্ধ করা যাবে না। খাবারের ওপর কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমা অনেকাংশেই নির্ভর করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন একধরনের খাবার থেকে দূরে থাকলে হুট করে সেসব খাবার বদহজম, পেট ব্যথা, বমিসহ নানা ধরনের হজম-সংক্রান্ত জটিলতাও তৈরি হয়। তাই সময় নিয়ে ওজন কমানো এবং তা ধরে রাখাই ভালো। হুটহাট করে ডায়েট ছেড়ে আবার ধরার প্রবণতা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।
Like this:
Like Loading...