ওবামার সিরিয়ানীতির সমালোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্য পর্যায়ের ৫০ জন কর্মকর্তা এক যৌথ ‘ভিন্নমতপত্রে’ সিরিয়ায় আসাদ সরকারের প্রতি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চলতি নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
সিরিয়ায় অব্যাহত সহিংসতার মুখে সামরিক শক্তি বিশেষত বিমান আক্রমণের বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আসাদ সরকারকে বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বাধ্য করা সম্ভব বলে ভিন্নপত্রে মত প্রকাশ করা হয়।
পররাষ্ট্রনীতির কোনো বিষয়ে আপত্তি বা সমালোচনা প্রকাশের জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ‘ডিসেন্ট চ্যানেল’ বা ভিন্নমত প্রকাশের প্রক্রিয়া চালু করা হয়।
প্রেসিডেন্ট ওবামা সিরিয়ায় আসাদ সরকারের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার বদলে ইসলামিক স্টেটের হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই রণকৌশলের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, রাশিয়ার সমর্থনে আসাদ সরকারকে আংশিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উৎসাহিত করা। যৌথপত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আসাদ সরকার এই আংশিক যুদ্ধবিরতি কখনোই মেনে চলেনি। বরং কোনো প্রত্যক্ষ চাপ না থাকায় প্রেসিডেন্ট আসাদ বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কোনো প্রয়োজন অনুভব করেননি। এই পত্রে বলা হয়, ‘সিরিয়া ও নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো বর্তমানে যে অস্থিরতার মুখে রয়েছে, তার মুখ্য কারণ হলো আসাদ সরকারের অব্যাহত নির্বিচার বোমাবর্ষণ।’
পত্রে বলা হয়, সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধের নৈতিক যৌক্তিকতা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। কিন্তু এই স্থিতাবস্থা যদি বজায় থাকে, তাহলে সিরিয়ার মানবিক, কূটনৈতিক ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংকট আরও বাড়তেই থাকবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বেশি অর্থপূর্ণ শক্তিপ্রয়োগের পক্ষে মত রেখেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা ও তাঁর সামরিক কমান্ডাররা সর্বাত্মক সামরিক শক্তিপ্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন। ইরাকের বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতার পর আসাদ সরকারের পতন হলে তাঁর শূন্য স্থান কে পূরণ করবে, সেই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
ভিন্নমতপত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য স্বীকার করেছেন, সিরিয়ায় যেকোনো সামরিক অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মকর্তারা যুক্তি দেখান, সামরিক হুমকি দেওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি নতুন করে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেবেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আসাদ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় ইরান ও সৌদি আরবের মতো আঞ্চলিক শক্তিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে তাঁরা মত দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এই ভিন্নমতের কথা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি টাইমসকে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বিভিন্ন নীতিগত প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের খোলামেলা মতামতকে সমর্থন করেন।
Like this:
Like Loading...