চাকর হবেন নাকি উদ্যোক্তা, ভাবুন আরও একবার
চাকুরী মানেই আমাদের কাছে নিরপত্তার এক গাছ। মাস গেলেই নির্দিষ্ট অংকের বেতন। বছর ঘুরতেই প্রমোশন আর ইনক্রিমেন্ট। সেই সাথে নয়টা পাঁচটা অফিস। বেশ তো কেটে যাচ্ছে। আর সরকারি চাকুরী মানে নিরাপত্তার বিশাল বটগাছ। যার ছায়াতলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিরাপত্তা। আর তাই লেখাপড়া শেষ করেই চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে সোনার হাতি খোঁজা। যদিও এ দৌড়ে সবাই এগিয়ে থাকতে পারছে না। তবে কারও কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি নাই।
চাকুরী আপনাকে যা দিয়েছে তার দিকে একটু তাকাই। মাস গেলে নির্দিষ্ট অংকের বেতন আর নিরাপত্তা। অফিসে বসের চোখ রাঙ্গানো বকা। অফিস শেষেও কাজ শেষ না হওয়ায় ওভার টাইম ডিউটি। কাজের ভুল ত্রুটির জন্য কখনও বা আর্থিক জরিমানা কিংবা আনুষঙ্গিক সুবিধা থেকে বঞ্চনা। সেই সাথে পেয়েছেন বাড়তি কাজের চাপ আর অফিসের মধ্যে বিরাজমান অসুস্থ পলিটিক্স। দিন শেষে বাড়ি ফিরেও টেনশন আর ফোনের বাড়তি ঝামেলা। ঘরের কাছের মানুষটির বকা, চাকুরীতো আরও মানুষ করে তুমি তো অফিস বাসায় নিয়ে আসছো।
চাকুরী আপনাকে যা থেকে বঞ্চিত করেছে তা শুনলে আতকে উঠতে পারেন। চাকুরী আপনার সৃজনশীল সৃষ্টির ক্ষমতাকে গলাটিপে হত্যা করেছে। আপনার মধ্যকার উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনাকে নয়টা পাচ টার যাতাকলে ফেলে বড় হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ করেছে। যেখানে আপনি নিজেই নিজের বস হতে পারতেন সেখানে আপনাকে অন্যের চাকর করেছে। আপনার ভেতরের জেগে ওঠার ক্ষমতাকে দাসত্বে পরিণত করেছে। আপনার যে ছোট্টশিশুটি বাবা বাবা বলে আপনাকে কাছে পেতে চায় তাকে অতৃপ্ত করেছে।
নিশ্চিত কিছুর জন্য থাকলে তো অনিশ্চিতের সম্ভাবনা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই ভাবেন আর চাকরি বাকরি করব না। এবার নিজেই কিছু একটা করব। কিন্তু বের হয়ে আসতে পারেন না সেই নিরাপত্তার বৃত্ত থেকে। আবার অনেকেই বলেন চাকুরী জীবন শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে শুরু করে অল্প দিনেই সেরা ধনী হয়ে যাব। কিন্তু তাদের দৌড় কতদুর? লাইফের ত্রিশটা বছরের যৌবন তো চাকুরী আপনার কাছ থেকে নিয়েই নিয়েছে। আপনার শক্তি, সামথ্য, মেধা, সময় কোনটাই চুষে নিতে ভুল করেনি আপনাকে নিযোগকারী প্রতিষ্ঠান। আপনাকে যদি বিশ হাজার টাকা বেতন দিয়েছে তো তার বিপরীতে আপনাকে দিয়ে দুই লক্ষ টাকা আয় করে নিয়েছে।
জীবনটা চামচে মার্বেল রেখে দৌড় খেলার মতই। আপনি দৌড়ে প্রথম হলেও চামচ থেকে মার্বেল পড়ে গেলে আপনার অর্জন শূন্য। জীবনের উচ্ছাস-উত্তেজনা, অনুভূতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দাসত্ব থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে। জ্বালানী বিহীন গাড়ির মত গতিহীন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ইদুরের গর্তে মুখ লুকিয়ে থাকা অনেক ভাল। নিরপত্তার জন্য সম্ভাবনাকে হত্যা করার কি দরকার। চেষ্টা করেই দেখুন। আপনার চেষ্টা আপনাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দরজা খুলেই রেখেছে।
মাসুদুর রহমান মাসুদ/ উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।
Like this:
Like Loading...