হাতিটা তখন একটা কলাগাছ ভেঙে খেতে শুরু করেছে। চোখে রাজ্যের কৌতূহল নিয়ে তার কলাগাছ চিবানোর দৃশ্য দেখছেন শ খানেক গ্রামবাসী। এর মধ্যেই অতি উৎসাহী একজন এগিয়ে গেছেন হাতির লেজ ধরবেন বলে। পেছনে নদীর পাড় ধরে একটু একটু করে এগোন, হাতি লেজ নাড়ালেই লোকটি আবার পিছিয়ে যান। একপর্যায়ে মজনু নামের সেই লোকটি হাতির লেজটা ছুঁয়ে ফেললেন। আর হাতি পেছনের পা দিয়ে মাটিতে লাথির ভঙ্গি করল, ঘুরে গেল মজনুর দিকে। মজনুর সেকি দৌড়। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের পাড়পাড়ায় ১০ আগস্ট এভাবেই হলো সেই ‘বিখ্যাত’ হাতিদর্শন। ৯ আগস্ট এক দফা চেষ্টা করে দেখতে পারিনি। ১০ তারিখে সকালেই রওনা হয়েছিলাম প্রথম আলোর সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি শফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছালাম ঝিনাই নদের ওপারের ধারাবর্ষা গ্রামে। ততক্ষণে সেদিনের হাতি ধরা অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। ধারাবর্ষা গ্রামের লোকজন অনেক দূর থেকে হাতির গতিবিধি দেখাচ্ছেন হাত দিয়ে। একজন বললেন, ‘সকালে এপারেই ছিল। আবার আসবে।’ এক নারী এসে দিলেন অভিনব তথ্য—‘অর সামনে খাড়াইয়া হাসলে হাতি কিছু কয় না। খুশি হয়।’ আরেকজন যোগ করেন, ‘আমাদের গ্রামেই উঠছিল। গাছের পাতা-টাতা খাইয়া নদীত নাইমা গেছে।’
ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করছি, কিন্তু হাতি আর ফিরে এল না। নদীর ওপারের দূরের চর পাড়পাড়ায় আবছা আবছা নড়াচড়া দেখা যায়। গ্রামের লোকজন এই কদিন হাতিটির উৎপাতে একরকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু আমাদের কাছে এই অভিজ্ঞতা নতুন। ঘাটে বাঁধা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পাড়পাড়ায় হাতির কাছে যাওয়া যাবে? নৌকার মালিক জানালেন, যাওয়া যাবে। সঙ্গে জানাতে ভুললেন না ‘হাতি কিন্তু নদীতে নেমে নৌকা দাবড়ায় (তাড়া করে)। তবে আমার নৌকায় ডবল ইঞ্জিন।’
হাতির লেজ ছুঁয়েই দে দৌড়!ডবল ইঞ্জিনের নৌকায় আমরা চললাম হাতিদর্শনে। পাড়পাড়ার কাছে যেতেই চোখে পড়ল মজনুর সেই হাতির লেজ ছোঁয়ার দৃশ্য। নৌকা থেকে নেমে হাতিকে দেখা হলো। শুকিয়ে গেছে অনেকটাই। পায়ে ঘা হয়েছে। হাতি কলাগাছ খেতে খেতে হঠাৎ পাড় থেকে নেমে পড়ল ঝিনাই নদের পানিতে। শুরু হলো সাঁতার। হাতির সেই সাঁতার সত্যিই দেখার মতো। দারুণ গতি। আমরা আবার হাতির পিছু নিলাম। হাতি পানিতেই হেঁটে চলছে আপন মনে। ঘণ্টা খানেক দেখা হলো হাতির গতিবিধি। ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছিল হাতিটি। গত ২৮ জুন বন্য হাতিটি ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। ২৭ জুলাই হাতিটি সরিষাবাড়ী উপজেলায় আসে।
শিমলা বাজারের কালাচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী অনিল ঘোষ বললেন, ‘একদিন তো নদীর পাড়ের একটি দেয়ালের আরসিসি পিলার শুঁড় দিয়েই তুলে ফেলেছে। তবে আমাদের এলাকায় হাতির আঘাতে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। ’
হাতিবিষয়ক সর্বশেষ খবর (১১ আগস্ট এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) হলো হাতিটিকে অবশেষে বাগে আনা গেছে। সরিষাবাড়ীতে এর আগে কোনো বন্য হাতি এভাবে আসেনি। দীর্ঘদিন সরিষাবাড়ীর মানুষের মনে থাকবে হাতিটি নিয়ে এই হুলুস্থুল কাণ্ড।